• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
এক কোটি টনের মাইলফলকে খাদ্যশস্য আমদানি

চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি হয়েছে ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার টন

ছবি সংরক্ষিত

আমদানি-রফতানি

এক কোটি টনের মাইলফলকে খাদ্যশস্য আমদানি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ জুন ২০১৮

চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি হয়েছে ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার টন। এর মধ্য দিয়ে আমদানির অঙ্ক পৌঁছল এক কোটি টনের মাইলফলকে, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে গত অর্থবছর ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়, যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে চলতি অর্থবছরের আমদানির ওই রেকর্ড ছাড়িয়েছে বহু আগেই। এখন পর্যন্ত মোট খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার টন। এর মধ্যে সরকার আমদানি করেছে ১৬ লাখ; বাকিটা বেসরকারি খাত।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী আরো প্রচুর খাদ্যশস্য আমদানি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৯ জুন পর্যন্ত খাদ্যশস্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে এক কোটি ৯৮ লাখ টনের। এর মধ্যে চাল ৪৬ লাখ ৭৪ হাজার ও গম ৬৩ লাখ ১৫ হাজার টন। আর এসব এলসির মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯০ লাখ ৬৭ হাজার টনের।

গত বছর দুই দফা বন্যায় ও ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে সরকারের সংগ্রহ কার্যক্রমে ব্যর্থতা নেমে আসে। এ কারণে শুল্ক ও বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে অবাধে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে চাল আমদানির পরিমাণ বাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে।

সম্প্রতি প্রস্তাবিত বাজেটে চাল আমদানিতে শুল্ক পুনরায় ২৮ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া গত মঙ্গলবার চাল আমদানিতে দেওয়া বিশেষ ছাড় প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এখন আর আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শূন্য মার্জিনে ঋণপত্র স্থাপনের যে সুযোগ ছিল তাও প্রত্যাহার হয়েছে। একই সঙ্গে চাল ব্যবসায়ীদের গৃহীত অগ্রিম ও ঋণ সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন অন্তর আবশ্যিকভাবে পরিশোধ ও সমন্বয়ের সুযোগ বন্ধ করে আগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।

এদিকে প্রচুর আমদানির ফলে সরকারের গুদামগুলোতেও চালের মজুত অনেক বেড়েছে। এখন সরকারি গুদামে মজুত আছে ১২ লাখ ৯৯ হাজার টন খাদ্যশস্য। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল ও দুই লাখ ৬১ হাজার টন গম।

দেশে গত মাস থেকে আবারো সরকারিভাবে ইরি-বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করেছে সরকার। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় সরকার ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত ২০ জুন পর্যন্ত চার লাখ ৩২ হাজার ৯৯৪ টন চাল সংগ্রহ শেষ হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত বছরের জুনে দেশে চালের মজুত পৌঁছেছিল এ যাবতকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সে সময় সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল এক লাখ ৯১ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরের একই সময় চালের মজুত ছিল নয় লাখ ৯৮ হাজার, ২০১২-১৩ অর্থবছর ছয় লাখ ৯৯ হাজার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছয় লাখ ৫৮ হাজার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সাত লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই সময়ে ছিল ছয় লাখ ৯৬ হাজার টন।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ টন ধান-চাল উৎপাদন হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বছরে খাদ্য চাহিদা রয়েছে তিন কোটি টনের মতো। বাকি প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ৫০ হাজার টন চালও রফতানি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও গত বছর দুই দফায় বন্যায় তীব্র চাল সঙ্কটের মুখোমুখি হয় দেশ।

এদিকে কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার এক কোটি ৯০ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আর গত বছর এক কোটি ৮০ লাখ ১৩ হাজার টন বোরো চাল উৎপাদন হয়েছিল। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ৮০ লাখ ৩৭ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক কোটি ৯০ লাখ সাত হাজার টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads