• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
চা রফতানিতে ধস

চা সংগ্রহ করছে চা শ্রমিক

সংরক্ষিত চবি

আমদানি-রফতানি

চা রফতানিতে ধস

লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৪৪.৬০ শতাংশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০১৮

চা রফতানিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বিদায়ী অর্থবছরে চা রফতানিতে আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তার তুলনায় প্রায় অর্ধেক আয় হয়েছে। অপরদিকে আগের অর্থবছরে যে পরিমাণ আয় হয়েছিল তার প্রায় ৪০ শতাংশই কম হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে।

চা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় চা রফতানির পরিমাণ কমছে। এ কারণে চা রফতানিতে থেকে আয়ের পরিমাণ কমছে।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৭-১৮) চা রফতানি থেকে ৫০ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে আয় হয়েছে মাত্র ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৫.৪ শতাংশ। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ৪৪.৬০ শতাংশই অর্জিত হয়নি। অপরদিকে আগের অর্থবছরের (২০১৬-১৭) তুলনায় চা রফতানি থেকে আয় কমেছে ৩৮। আগের অর্থবছরে চা রফতানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের চা রফতানির সুযোগ দিন দিন কমছে। উৎপাদন যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হারে চাহিদা বাড়ছে। ফলে চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে চা আমদানিও করতে হচ্ছে। তারপরও মানসম্পন্ন কিছু চা ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের মতো দেশে রফতানি হচ্ছে। মাঝারি মানের কিছু চা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ও নিম্নমানের কিছু চা পাকিস্তানে রফতানি হয়। তিনি আরো বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের যে নিলাম হয় তাতে প্রতি কেজি চা গড়ে ৩ ডলারে বিক্রি হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ার কারণে চা রফতানি করে খুব বেশি লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেও চা রফতানি থেকে আয় কমেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের বার্ষিক চাহিদার পরিমাণ প্রায় ৯০ মিলিয়ন কেজি। কিন্তু বর্তমানে চায়ের উৎপাদন ৮০ মিলিয়ন কেজির মতো। ফলে চাহিদার একটি অংশ আমদানি করেই মেটাতে হচ্ছে। ৮০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা ছিল ১০ লাখ কেজির মতো। তখন চা উৎপাদন হতো ৩০ লাখ কেজি। ওই সময় ২০ লাখ কেজির মতো চা রফতানিযোগ্য ছিল। গত ৪ দশকে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু তার চেয়ে বেশি বেড়েছে চাহিদা। ফলে চা রফতানি থেকে ক্রমান্বয়ে আয়ের পরিমাণ কমছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০০১ সালে বাংলাদেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৫৩ মিলিয়ন কেজি। ওই সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা ছিল প্রায় ৩৭ মিলিয়ন কেজি। এ হিসাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু চাহিদার পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই প্রয়োজন পড়ে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য। ২০১১ সালে চায়ের উৎপাদন হয় ৫৯ মিলিয়ন কেজি। ওই সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা ছিল সাড়ে ৫৮ মিলিয়ন কেজি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সামান্য বেশি হলেও ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা ছিল বেশি। ওই সময় বাংলাদেশে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হলেও চাহিদা ছিল ৬৭ মিলিয়ন কেজি। ২০১৫ সালেও উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা ছিল বেশি। ওই বছরে ৬৭ মিলিয়ন কেজি উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা ছিল সাড়ে ৭৭ মিলিয়ন কেজি। ওই সময় চাহিদার চেয়ে ১০ মিলিয়ন কেজি কম চা উৎপাদন হয়েছিল। গত ২০১৭ সালেও চাহিদার তুলনায় কম চা উৎপাদন হয়েছে। প্রায় ৮৬ মিলিয়ন কেজি চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ মিলিয়ন কেজি।

এদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদেশে চা রফতানির পরিমাণও কমছে। ২০০১ সালে প্রায় ১৩ মিলিয়ন কেজি চা রফতানি হলেও এটি এখন ১ থেকে ২ মিলিয়ন কেজিতে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালে ২.৫৬ মিলিয়ন কেজি চা রফতানি হয়েছে।

অবশ্য গত কয়েক দশকে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও চায়ের আবাদ খুব একটা বাড়েনি। ২০০০ সালে ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে চা চাষ হয়। ২০১৭ সালে চা চাষ হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার একর জমিতে। অবশ্য ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৯ হাজার একর জমিতে চা চাষ হয়েছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads