• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়ছে চাহিদা কমছে রফতানি

চা উত্তোলন করছে চা শ্রমিকরা

সংরক্ষিত ছবি

আমদানি-রফতানি

বাড়ছে চাহিদা কমছে রফতানি

উত্তরাঞ্চলে সাফল্য এলেও পাহাড়ে চা চাষে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৮

অভ্যন্তরীণ বাজারে তিন বছরে চা ও কফির ব্যবহার প্রায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় কফির তুলনায় চায়েরচা ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানি বাজার ধরে রাখতে ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে চা চাষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে চা চাষে প্রত্যাশিত গতি আসছে না। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালের শুরুতে নেওয়া প্রকল্পে বিরাজ করছে স্থবিরতা। ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের অনুকূলে এ পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থের মাত্র ৪৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমইডি সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোগে চা চাষ সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় বান্দরবান সদর ও রুমা উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে চা চাষ শুরু করার কথা ছিল। বাস্তবে এ পর্যন্ত মাত্র ১০ হেক্টর জমি চা চাষের আওতায় এসেছে। ১০ লাখ গাছের চারা বিতরণের লক্ষ্যের বিপরীতে এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৭৫ হাজার চারা।

পাঁচ বছরের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্থা জাতীয় চা বোর্ড। ৩০০ হেক্টর জমি চা চাষের আওতায় আনা, চাষিদের প্রযুক্তি, চা চারা ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধি ছিল প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। তা ছাড়া চা চাষ এগিয়ে নিতে জাতীয় চা বোর্ডের একটি আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠার কথা রয়েছে প্রকল্পের আওতায়।

২০১৬ সালের শুরুতে এ প্রকল্প অনুমোদন পেলেও প্রশাসনিক আদেশ জারির পর প্রকল্পটির পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় ওই বছরের ১০ জুলাই। তা ছাড়া চা চারা তৈরিতে সময় লাগে অন্তত দেড় বছর। প্রকল্প পরিচালক ছাড়া ৭ জন নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা স্থানীয় ভাষা না জানায় মতবিনিময় ও সচেতনতা বাড়ানোর কাজে সফল হচ্ছেন না।

ইতোমধ্যেই চাষের আওতায় আসা জমিতে উৎপাদিত চা বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হতে পারছেন না পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিপণনের ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। ক্ষুদ্র চাষিরা পাতা সংগ্রহ করে ৯০ কিলোমিটার দূরে ব্যক্তিমালিকানাধীন ফ্যাক্টরিতে পৌঁছান। এর ফলে চা পাতার মান নষ্ট হয়। প্রকল্পে একটি কারখানা স্থাপনের কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। যানবাহন ও জনবলের অভাবে দুর্গম এলাকায় সব সময় তদারকি করা যায় না। মোটরসাইকেল ছাড়া এ প্রকল্পের অন্য কোনো যানবাহন নেই।

প্রকল্পের আওতায় দ্রুত একটি ফ্যাক্টরি স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জমি তৈরি, চা চারা রোপণ ও দুর্গম এলাকা চাষের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

বিবিএস সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চা ও কফির অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার ছিল ১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সবশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর দেশে চা ও কফি ব্যবহার করা হয়েছে ২ হাজার ৬৬১ কোটি টাকার। তিন বছরে চা ও কফির ব্যবহার ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চা রফতানি করে আয় হয়েছে ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছর ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার মূল্যের চা রফতানি হয়েছিল। এক বছরে চা রফতানিতে আয় কমেছে ৩৮ শতাংশ। সমাপ্ত অর্থবছরে ৫০ লাখ ডলার মূল্যমানের চা রফতানির লক্ষ্য ছিল। এ হিসাবে আয় হয়েছে লক্ষ্যের ৪৫ শতাংশ কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় এই চা ছিল দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। চা রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে বড় ধরনের চাহিদা তৈরি হওয়ায় এখন বাংলাদেশকেই বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চা আমদানি করতে হচ্ছে।

চা বোর্ডের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি চা রফতানি হয়েছিল ১৯৯০ সালে। ওই বছরে রফতানি হয় ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি। তবে গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চা রফতানি হয় ২০০২ সালে। ওই বছর রফতানি হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি। এরপর ২০০৩ সালে রফতানি কিছুটা কমে ১ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। ২০০৪ সালে আবার কিছুটা বেড়ে বাংলাদেশ থেকে চা রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার কেজি। ২০০৯ সাল থেকে চা রফতানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যায়। ওই বছর রফতানি হয়েছিল মাত্র ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা। পরের বছর তা নেমে আসে মাত্র ৯ লাখ ১০ হাজার কেজিতে। ২০১১ সালে ১৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি ও ২০১২ সালে ১৫ লাখ কেজি চা রফতানি হলেও ২০১৩ সালে চা রফতানি হয় মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads