• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না ৬৫ শতাংশ রফতানি

নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না ৬৫ শতাংশ রফতানি

সংরক্ষিত ছবি

আমদানি-রফতানি

নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না ৬৫ শতাংশ রফতানি

ব্যবসায়ীদের গাফিলতি ও অবকাঠামোগত সমস্যা অন্যতম কারণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ আগস্ট ২০১৮

দেশের তৈরি পোশাক খাত বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়িয়েছে। পোশাক রফতানিতে আমরা এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। তবে ব্যবসায়ীদের কিছু ভুলের কারণে এই খাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে ঝুঁকি বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর অর্থ নিয়ে সঠিকভাবে ফেরত দিচ্ছে না এ খাতের ব্যবসায়ীরা। আর ৬৫ শতাংশ রফতানি ব্যবসায়ীরা নানা কারণে সঠিক সময়ে করতে পারছেন না। এতে ব্যবসায়ীদের গাফিলতি যেমন আছে। অপরদিকে, দেশের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে পণ্য রফতানি নির্ধারিত সময়ে করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনস ইন আরএমজি বাই ব্যাংকস : রিস্কস অ্যান্ড মিটিগেশন টেকনিকস’ শীর্ষক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব বলছে, গত অর্থবছরে পোশাক খাতের মোট রফতানি আয় ছিল ৩০ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রফতানির ৮২ শতাংশ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে পণ্য রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। যার ৩২ বিলিয়ন ডলারই পোশাক খাত থেকে আসবে। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ, গুণগতমান ঠিক রাখা, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকাসহ বিদেশে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যেতে পারে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রফতানি বাড়াতে অবকাঠামো ও বন্দর ব্যবস্থাপনার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। 

বিআইবিএম বলেছে, তৈরি পোশাক খাতের অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৬ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা পোশাক খাতের অর্থায়নে বড় বাধা বিলম্ব রফতানি। আবার রফতানিকারকরা সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন না করায় অর্থায়নে জটিলতা তৈরি হয় বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ ব্যাংকার।

মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, গ্রাহকদের ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য সেবার মান আগের চেয়ে ভালো। তবে পুরোপুরি কমপ্লায়েন্স মানার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। এজন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহমুদ হোসেন, বিকেএমইএ দ্বিতীয় সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন বক্তৃতা করেন।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংক খাতের রফতানিকেন্দ্রিক জালিয়াতি কমাতে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিজিএমইএর মতো বিআইবিএমেরও নতুন কোর্স চালুর সুযোগ রয়েছে। এটি বৈদেশিক বাণিজ্যে জালিয়াতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পোশাক খাতের রফতানি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া পুরোপুরি অটোমেশন হলে দীর্ঘ মেয়াদি সুফল পাওয়া যাবে।

হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ঝুঁকি কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। পোশাক রফতানিতে ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা সাব-কনট্রাক্ট। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাব-কনট্রাক্টের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

ইয়াছিন আলি বলেন, দেশ থেকে ঋণের নামে অর্থ পাচার বড় অপরাধ। ব্যাংক কর্মকর্তারা জেনেও অনেক ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারে না। তবে একটি ফাঁস হলে তখন অন্য ঘটনা সামনে চলে আসে। 

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংককে উদ্যোগ নিয়ে নজরদারি করতে হবে। এতে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা দূর করা সম্ভব হবে।

এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। রফতানিকারকদেরও নিজস্ব দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।

বিকেএমইএর দ্বিতীয় সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ৬৫ শতাংশ রফতানি নির্দিষ্ট সময়ে করা সম্ভব হয় না নানা কারণে। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পোশাক খাতে দক্ষ শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এ দেরি হয়। আবার দেশের অবকাঠামোগত সমস্যাও কারণ হিসেবে রয়েছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন বলেন, পোশাক খাতের বাণিজ্য অনেকটা বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। সব নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে সব কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে জেনে বুঝে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads