• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

বুড়িমারী স্থলবন্দরে অবস্থঅনরত ভারত ও ভুটান থেকে আসা পন্যবাহী ট্রাক

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

  • এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পণ্য পরিবহনে সময় ও আর্থিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় ত্রিদেশীয় ব্যবসাকেন্দ্র বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। এদিকে সংস্কারের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটে ওয়াগন সেবা এবং আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস।

২০১০ সালে স্থানীয় এমপি তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে রেলপথ সংস্কার করে বুড়িমারী থেকে আন্তঃনগর ট্রেন ও ওয়াগন সেবা চালুর আশ্বাস দেন। পরে সংস্কার কাজ শুরু হলে আশায় বুক বাঁধেন এ জনপদের মানুষ। কিন্তু সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, বুড়িমারী থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার কোনো পরিবহন দিনের বেলা চলাচল করে না। সরাসরি বুড়িমারী-ঢাকা আন্তঃনগর কোনো ট্রেনের ব্যবস্থাও নেই। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে লালমনিরহাট থেকে লালমনি এক্সপ্রেস নামের একটি আন্তঃনগর ট্রেন থাকলেও শাটল ট্রেন না থাকায় সেবা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীসহ সাধারণ যাত্রীরা। ফলে বুড়িমারী থেকে ঢাকা যাতায়াতে রাত্রীকালীন দূরপাল্লার পরিবহনই ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা। এজন্য পণ্য পরিবহনে সময় অপচয় ও অনিশ্চিত যাত্রায় অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় লোকসান গুনতে হয় তাদের।

জানা যায়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে পণ্য পরিবহনে (রেলওয়ে) ওয়াগন সেবা ও বুড়িমারী-ঢাকা আন্তঃনগর রেল যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে ২০১১ সালে বুড়িমারী থেকে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ সংস্কার কাজ শুরু হয়। ওই সময় নতুন করে ৩৬টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার লুব রেললাইন নির্মাণ, ব্যালান্সওয়াল নির্মাণসহ দ্বিতীয় শ্রেণির ৭টি স্টেশন ও প্লাটফর্ম সংস্কার করা হয়। ডিজিটাল করা হয় রেলওয়ের সব সিগন্যাল। ২০১৩ সালে সংস্কার কাজ শেষ হলে এ রুটে রেলের গতিবেগ দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু শুধু মানসম্মত ইঞ্জিন না থাকায় এ রুটে রেলের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার স্থলে ঘণ্টায় ৪০-৬০ কিলোমিটার বেগে মোট ৪টি ট্রেন চলাচল করছে। ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে যেমন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও।

বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার আগে ওয়াগনের মাধ্যমে এ স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করা হতো। তখন ব্যবসায়ীদের পরিবহন ব্যয় কম হতো। রেলবিভাগও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছিল। কিন্তু সেতু চালু হওয়ার পর ওয়াগন সেবা বন্ধ হওয়ায় সড়ক পথে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। ফলে দিনে দিনে স্থলবন্দরটির বৈদেশিক গুরুত্ব কমতে থাকে।

পাথর ব্যবসায়ীরা বলেন, বুড়িমারী থেকে প্রতিমাসে লাইম স্টোন, ডলোমাইন, ওয়াগনের মাধ্যমে পাথর পরিবহন করা হলে পরিবহন ব্যয় অর্ধেকের নিচে কমে আসবে। ব্যবসায়ীরা আর্থিক ও সময় দুটোতে সাশ্রয় পাবে। রেল বিভাগের রাজস্ব আয় বাড়বে। লালমনিরহাট রেলবিভাগের সহকারী বিভাগীয় ট্রাফিক সুপার (এটিএস) সাজ্জাত হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথ সংস্কারের পর শুধু যাত্রী পরিবহনে রাজস্ব আয় কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে এ রুটে ওয়াগন চলাচলের জন্য সব ধরনের সুবিধা থাকলেও ওয়াগন না থাকায় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ভারি ওয়াগন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads