• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আটকে আছে পণ্যবোঝাই ছয় হাজার ট্রাক

আটকে আছে পণ্যবোঝাই ছয় হাজার ট্রাক

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

আটকে আছে পণ্যবোঝাই ছয় হাজার ট্রাক

  • বেনাপোল প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৯ মার্চ ২০১৯

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় উচ্চ শুল্কের পণ্যবোঝাই ৬ হাজার ট্রাক আটকে আছে। দিনে পর দিন এসব পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে থাকায় ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের। পাশাপাশি বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে রাজস্ব আদায়ে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

অভিযোগ উঠেছে, বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সিরিয়ালের অজুহাতে দিনের পর দিন উচ্চ শুল্কের পণ্যের চালান কৌশলে আটকে রাখে। ফলে ট্রাকপ্রতি দিনে ২ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এই চক্রের কারণে মোটা অঙ্কের লোকসানের ভয়ে এই পথে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল বন্দর সূত্র জানায়, প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। বেনাপোল কাস্টমস হাউস প্রতি অর্থবছরে ৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে এই বন্দর থেকে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে এ ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫৬০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে কাস্টমস সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, বেনাপোল চেকপোস্টে নানা ধরনের বাড়তি নিয়মকানুন চালু করায় ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে দেরি হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয় এক-একটি ট্রাক এন্ট্রি করতে ২০ মিনিট করে সময় লাগায় সারা দিনে ট্রাক আসা কমে গেছে। আগে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। সময়ক্ষেপণের কারণে বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০টিতে। চেকপোস্টে বিজিবি, কাস্টমস ও বন্দর আলাদাভাবে রেজিস্টার্ড খাতায় ট্রাক এন্ট্রি করায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যে চট্টগ্রামে যে মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়, বেনাপোলে তার চেয়ে বেশি মূল্যে শুল্কায়ন করায় আমদানিকারকরা চট্টগ্রামের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া বন্দরে নানা জটিলতার কারণে অনেক আমদানিকারক বৈধ পথে আমদানি কমিয়ে চোরাপথে পণ্য আমদানি করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য দ্রুতকরণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও দিনের রাজস্ব দিনে আদায়ের জন্য বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল গত বুধবার বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের দফতরে কাস্টমস ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়ার নির্দেশে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন দুই দেশের ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও আমদানি-বাণিজ্য বাড়াতে পারছেন না। তবে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে অবিলম্বে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাক এন্ট্রির নামে অহেতুক সময় নষ্ট করায় এই পথে আমদানি-রফতানি কমে গেছে। এতে রাজস্ব আদায়ে ধস নামতে শুরু করেছে।

কাস্টমস চেকপোস্টের একটি পয়েন্টে ট্রাক এন্ট্রি করলে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি আমদানি-রফতানি বাড়বে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা।

সভায় জরুরি ভিত্তিতে দুই দেশের কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যৌথ সভা করে বিরাজমান সমস্যা নিরসন করার সিদ্ধান্ত হয়।

অন্যদিকে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন একই দিনে। তারা দুই দেশের মধ্যে কীভাবে আমদানি-রফতানি বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে বিভিন্ন পয়েন্ট তুলে ধরেন কমিশনারের কাছে। তারাও যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের ওপর জোর দেন।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, ভারতের কাস্টমসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে পেট্রাপোল বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads