• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
পণ্য আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার দাবি

ছবি : সংগৃহীত

আমদানি-রফতানি

পোলট্রি শিল্পে হতাশা

পণ্য আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার দাবি

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০১৯

দেশের প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে প্রবেশের যে স্বপ্ন দেখছিলেন, পোলট্রি শিল্প উদ্যোক্তাদের সে স্বপ্ন এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পূরণ হয়নি। আশা ভঙ্গ হয়েছে পোলট্রি খামারি ও উদ্যোক্তাদের। পোলট্রি ফিডের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর এবং সয়াবিন অয়েল কেকের ওপর থেকে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার না হওয়ায় এবং সব ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুনভাবে আগাম কর (এটি) আরোপ হওয়ায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন পোলট্রি শিল্প উদ্যোক্তারা।

গতকাল মহাখালীতে প্যারাগন হাউজে অনুষ্ঠিত বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে পোলট্রি নেতারা এসব কথা বলেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, দেশের আমিষ ও পুষ্টিচাহিদা মেটাতে দিন দিন পোলট্রি শিল্পের অবদান বেড়েই চলেছে। মোট প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৪০-৪৫ ভাগই জোগান দেয় এই শিল্পটি। এ ছাড়া জাতীয় অর্থনীতিতে পোলট্রি শিল্পের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে। পোলট্রির মাংস ও ডিম এখন সহজপ্রাপ্য এবং অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যাওয়ার কারণে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী কমবেশি নিয়মিতই পোলট্রির মাংস খেয়ে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারছে। দেশে যে পরিমাণ ডিম, মুরগির বাচ্চা ও ফিডের প্রয়োজন, তার শতভাগ এখন দেশীয়ভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে। এমনকি দেশের ডিম ও মাংসের শতভাগ চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদনও হচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে রপ্তানির সম্ভাবনাও।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কমবেশি ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে শিল্পটির ওপর। এমতাবস্থায় এ শিল্পের অনুকূলে বাজেটে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার না করায় বড় ঝুঁকিতে পড়বে এই শিল্প খাত। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এবং ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আয়কর সমতার নীতি অনুসরণের লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সংগ্রহের ওপর উৎস আয়কর কর্তনের বিধান পুনঃসংযোজন করা হয়েছে। এ বিধানটি কার্যকর হলে দেশীয় উৎস থেকে সংগৃহীত পোলট্রি ফিড তৈরিতে ব্যবহূত বিভিন্ন উপকরণ— যেমন ভুট্টা, রাইস ব্রানসহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎস কর কর্তন করতে হবে। এতে পোলট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে, যা সামগ্রিকভাবে পোলট্রির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে।

পোলট্রিসংশ্লিষ্টরা বলেন, কয়েক বছর ধরে পোলট্রি খাতের উন্নয়ন এবং ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে বাজেটে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে অনুরোধ জানিয়ে আসছেন তারা। একই সঙ্গে তাদের দাবির যৌক্তিকতাও উপস্থাপন করে আসছেন কিন্তু কার্যত তেমন কোনো সুফল পাচ্ছেন না।

ফিআব সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, সয়াবিন অয়েল কেকের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি; কটন সিড ও পাম নাটসের ওপর থেকে ৫ শতাংশ সিডি ও ৫ শতাংশ এটিভি এবং ভুট্টার ওপর থেকে ৫ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহারই ছিল এবারের অন্যতম দাবি। আমরা আশা করেছিলাম, এ দাবি পূরণ হলে পোলট্রি ফিড, সেই সঙ্গে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কিছুটা কমবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ফিডের উপকরণ হিসেবে যে ৩টি উপকরণে কর ও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে- ১. অ্যামোনিয়া বাইন্ডার, ২. লিভার, রেনাল ও রেসপিরেটরি প্রটেকটর এবং ৩. ভ্যাকসিন স্ট্যাবিলাইজার (থিওসালফেট)। এগুলোর সঙ্গে ফিড ইন্ডাস্ট্রির কোনো সম্পর্ক না থাকায় তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। তবে বিদ্যমান সুবিধাদি বহাল রাখা এবং রাইস ব্রানের রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবে সন্তোষ প্রকাশ করেন ফিআব সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান। একই সঙ্গে ডি-অয়েলড রাইস ব্রানের (ডিওআরবি) ওপরও সমহারে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি। তার মতে, যেহেতু এ দুটি উপকরণ মূলত একই পণ্য, তাই শুল্ক সমান না হলে এক পণ্যের নামে অন্য পণ্য রপ্তানি করে মুনাফা লোটার চেষ্টা করবে সুযোগসন্ধানীরা।

 

এ প্রসঙ্গে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবি) সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, পোলট্রি খাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কারণে হ্রাসকৃত অর্থ সমন্বয়েরও কোনো সুযোগ নেই। তাই এ বিধান প্রযোজ্য হলে একদিন বয়সী জিপি/পিএস বাচ্চা, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম কর হিসেবে কর্তন করা হবে। ফলে বাচ্চার উৎপাদন কার্যক্রমে চলতি মূলধনের সংকট সৃষ্টি হবে।

বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর থেকেই ‘পোলট্রি ফিডের দাম কমবে’ বলে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হতে থাকে। এতে সাধারণ খামারিরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। গত ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ‘পোলট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পে’ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। এ ছাড়া আছে ব্রিডার ফার্ম, হ্যাচারি, মুরগির খাবার তৈরির কারখানা। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লিংকেজ শিল্প, কাঁচামাল ও ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এ শিল্পের আরো বিশেষত্ব হলো, সবচেয়ে কম জমির ব্যবহার, কম দূষণ, পানির খরচ কম। এ ছাড়া এর সব ধরনের বর্জ্যই রিসাইকেলযোগ্য। এ কারণে কৃষি ও পরিবেশ সহায়ক শিল্প হিসেবে পোলট্রি শিল্পের ভূমিকা ও সম্ভাবনা অফুরন্ত। পোলট্রির বিষ্ঠা থেকে বায়োগ্যাস, জৈবসার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। প্যারাগন পোলট্রি, কাজী ফার্মসের মতো বড় প্রতিষ্ঠান নিজস্ব খামারে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে অভিনব এ পদ্ধতিকে কাজে লাগাচ্ছে। পোলট্রি বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, ২০ হাজার মুরগির একটি ব্রয়লার খামার থেকে প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড বিষ্ঠা বা লিটার পাওয়া সম্ভব। এটি কাজে লাগাতে পারলে পোলট্রি শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তাই এই শিল্পের সম্ভাবনাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগাতে পোলট্রি ফিডের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর এবং সয়াবিন অয়েল কেকের ওপর থেকে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি পোলট্রি শিল্প উদ্যোক্তাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads