• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কাঁচা চামড়া রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

ছবি : সংগৃহীত

আমদানি-রফতানি

কাঁচা চামড়া রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে তদবির

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৬ আগস্ট ২০১৯

দেশে কাঁচা চামড়ার বাজারে অরাজকতা দূর করতে রপ্তানির দ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানালেও কাঁচা চামড়া রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আদৌ এটি কার্যকর হবে কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য অনেকে বলছেন, চামড়ার বাজারে সৃষ্ট অরাজকতায় এরই মধ্যে কোরবানিদাতা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে লোকসান যা হওয়ার হয়ে গেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী জোর তদবির করে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরিবের হক নিয়ে এবার নজিরবিহীন অরাজকতা তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। তবে এই লোকসান মুনাফা হিসেবে ঘরে তুলবেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা।

অবশ্য ট্যানারি মালিকরা কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে স্বাগত জানিয়েছেন আড়তদাররা। এতে ট্যানারি মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা কমবে বলেও তারা মনে করছেন। 

আলাপকালে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিলেও এবারের সংগৃহীত চামড়া রপ্তানি করা সহজ হবে না। কাঁচা চামড়া রপ্তানি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এছাড়া এতটা তাড়াহুড়ো করে এটি করাও যাবে না। এটা অনেক কঠিন একটা বিষয়। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে হলে যে ধরনের অবকাঠামোগত সহায়তা থাকা দরকার সেটি করা হয়নি। কেবল কাগজে-কলমে অনুমিত দিয়ে শেষ করলে হবে না। শুধু অনুমতি দিলেও তো রপ্তানি করা যায় না। কাঁচা চামড়া নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কন্টেইনার থাকতে হবে। রপ্তানির বাজার তৈরি করতে হবে। লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে হবে। আরো অনেক কিছু লাগবে। এসব করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার সুযোগ নেই। তবে দেরি করে যদি কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হয় তাহলে এর সুবিধা সাধারণ মানুষ পাবেন না। গরিব-মিসকিন, এতিম ও দুস্থরা এর কোনো বেনিফিট পাবেন না। বেনিফিট পাবেন আড়তদাররা ও যারা ফড়িয়াদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা। এ কারণে তিনি সরকারের প্রতি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন।

শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিলে শতভাগ দেশীয় এই শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তিনি মনে করেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার যদি দুই তিন মাস আগে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিতে পারত তাহলে গরিব-মিসকিন, এতিম ও দুস্থরা ঠকতেন না।

এদিকে আগামীকাল থেকে সরকার নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছে চামড়া শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। গত বুধবার  বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মফিজুল ইসলামের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর কাঁচা চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে সরকারের কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত বাতিলও হতে পারে।

অবশ্য কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা চামড়া রপ্তানির অনুমতির জন্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও তারা বলছেন, এবারে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা সহজ হবে না।

কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এর আগে কখনো কাঁচা চামড়া রপ্তানি হয়নি। বিষয়টি নতুন। এ কারণে সময় লেগে যাবে। তবে চামড়া রপ্তানির সুযোগ থাকলে আগামী বছরগুলোতে এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, সরকার চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকে অনেকেই যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে কোরবানিদাতারা চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাবেন। আবার আড়তদারদের ট্যানারি মালিকদের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। টাকার সমস্যাও থাকবে না। গরিবের হকও নষ্ট হবে না।

এবার কোরবানির পর থেকে কাঁচা চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলেছেন। অনেকে ডাস্টবিনে চামড়া ফেলে দিয়েছেন। চামড়ার দাম কমে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পরস্পরকে দায়ী করছেন। ট্যানারি মালিকরা কাঁচা চামড়ার দাম কমানোর নেপথ্যে আড়তদারদেরই দায়ী করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads