• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

আমদানি-রফতানি

কাজে আসছে না প্রণোদনা, রপ্তানি আয় কমছেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৯

রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার নানা প্রণোদনা ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও অব্যাহতভাবে কমছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্জিত আয়ও কমেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমকি ৮২ শতাংশ কম।

গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক হাজার ৪৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু এ সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে এক হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্জিত এ হার ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্য ছিল ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৭১ কোটি ১১ লাখ ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির অর্ডার কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি বাণিজ্য কমে গেছে। রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে হলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা নাহলে আগামীতে রপ্তানি আয় আরো কমে যাবে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রপ্তানি উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। তাই তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রপ্তানি খাতে।

আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ও কমেছে। অর্থবছরের অক্টোবর শেষে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ কম। এ সময় রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে দশমিক ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, পোশাক রপ্তানি কমছে। আগামীতে আরো কমবে। এখন বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু আগের চেয়ে অর্ডার কমেছে পাশাপাশি মূল্যও কম দিচ্ছি। প্রতিযোগী দেশ যেমন ভারত, ভিয়েতনামের সরকার পোশাকে নগদ সহায়তা দিচ্ছে কিন্তু আমরা কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। তাই আমরা রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে আরো কঠিন সময় আসছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা নিয়ে সরকারকে এ খাতে নগদ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান পোশাক মালিকদের এ নেতা।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রপ্তানি আয় কমেছে। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে ৩৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। চার মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। চার মাসে চামড়াজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। অক্টোবর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) পণ্য রপ্তানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানিতে এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় করে বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। পণ্য খাতে রপ্তানির টার্গেট সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads