• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
করোনা ভাইরাসের প্রভাব; বিপাকে ব্যবসায়ীরা

করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে রপ্তানি বন্ধ থাকায় পাইকগাছায় মজুদ রাখ কাঁকড়া ও কুচিয়া মারা যাচ্ছে

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

আমদানি-রফতানি

করোনা ভাইরাসের প্রভাব; বিপাকে ব্যবসায়ীরা

  • পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাইকগাছার কাঁকড়া-কুঁচিয়ায় চীনের করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রায় সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গত ২০ দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় মারা যাচ্ছে মজুদকৃত কাঁকড়া ও কুঁচিয়া। কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার ব্যবসায় ধস নামায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ব্যবসায়। ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা আর্থিক ক্ষতির আশংকা করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন মৎস্য দপ্তর। কাঁকড়া রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে তবে চীন অতি সম্প্রতি আশ্বস্ত করায় পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা।

সূত্রমতে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় অত্র এলাকা চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া উৎপাদনের জন্য অত্যান্ত সমৃদ্ধ। এখানকার উৎপাদিত শিলা কাঁকড়া সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, অত্র উপজেলায় ২শ হেক্টরে শুধুমাত্র কাঁকড়া এবং ১৭ হাজার হেক্টর মিশ্র ঘের থেকে কাঁকড়া উৎপাদন হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে এসব উৎস থেকে কুচিয়াও উৎপাদন হয়। উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সূত্রমতে, অত্র এলাকা থেকে গত বছর ৪ হাজার ১শ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও ৩শ মেট্রিক টন কুচিয়া উৎপাদন হয়। উৎপাদিত কাঁকড়া ও কুচিয়া চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও হংকং সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। যার মধ্যে ৯০ ভাগ কাঁকড়া শুধুমাত্র চীনেই রপ্তানি হয়। মাস খানেক আগে চীনে করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ায় গত ২৫ জানুয়ারী থেকে বাংলাদেশ থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন অত্র এলাকার সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী চাষীরা। ২০ দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় ধস নেমেছে কাঁকড়া ও কুচিয়া ব্যবসায়। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অলস সময় পার করছে ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চালু রাখলেও সরবরাহ ও কেনা-বেচা নেই বললেই চলে। দামও নেমে এসেছে কয়েকগুণ। মূলত ৪টি গ্রেডে স্ত্রী কাঁকড়া এবং ৫টি গ্রেডে পুরুষ কাঁকড়া বিক্রি হয়ে থাকে। গ্রেড অনুযায়ী দামও কমবেশি হয়ে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাকালীন সময়ে ২১০ গ্রামের ডবল এফ-১ স্ত্রী কাঁকড়ার কেজি প্রতি মূল্য ছিল ১৬শ থেকে ২ হাজার। যা নেমে এসেছে ৫শ টাকায়। ৫শ গ্রাম ওজনের ডবল এক্স এল পুরুষ কাঁকড়ার কেজি প্রতি মূল্য ছিল ১১-১২শ টাকা। যা বর্তমানে চলছে ৫শ টাকা। অপরদিকে যে সব ব্যবসায়ী ও হ্যাচারী মালিকরা কাঁকড়া ও কুচিয়া মজুদ করে রেখে ছিলেন দীর্ঘদিন মজুদ করে রাখায় মরতে শুরু করেছে কাঁকড়া ও কুচিয়া। মূলত কাঁকড়া ছোট ছোট পুকুর জলাশয়ে মজুদ করা হয়। এদের যখন খোলস পরিবর্তন হয় তখন একটি অপরটিকে খেয়ে ফেলে, আবার মারামারি করেও দুর্বল হয়ে মারা যায় অনেক। পাশাপাশি কুচিয়া লাইভফিড খাবার খাওয়ায় হাউজ ও ড্রামে যেসব কুচিয়া মজুদ করে রাখা হয়েছে তা মরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কাঁকড়া ও কুচিয়া মারা যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। অনেকেই ব্যাংক ও এনজিও ঋণ নিয়ে ব্যবসা করায় আর্থিক এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য প্রতিনিয়ত চাঁপ দিচ্ছেন। অনেকেই আবার ফঁড়িয়াদের নিকট দিয়েছেন মোটা অংকের টাকা দাদন। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ খাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান ও ক্ষতির আশংকা করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী ব্যক্তিরা। কাকা-ভাইপো ডিপোর স্বদেব বাছাড় জানান, আগে প্রতিদিন ১শ কেজি কাঁকড়া কেনা হতো। যেখানে এখন ৫ কেজি কেনা হচ্ছে। নানা-নাতি এন্টারপ্রাইজে বেলাল হোসেন সরদার জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলাম। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এনজিও কর্মীরা প্রতিনিয়ত ঋণের কিস্তির জন্য চাঁপ দিচ্ছে। প্রিয়াংকা ডিপো মালিক বকুল কুমার মন্ডল জানান, প্রতিদিন নূন্যতম ১টন কুচিয়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। গত ২০ দিন ড্রামে যে সব কুচিয়া মজুদ করে রেখে ছিলাম ধীরে ধীরে তা মারা যাচ্ছে।

দিনবন্ধু মন্ডল জানান, কাঁকড়া ও কুচিয়ার জন্য এই মৌসুমটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সারাবছর যে ব্যবসা হয় তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যবসা হয় এই মৌসুমে। কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেবব্রত দাশ জানান, সদর সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৫শ ডিপো রয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারী থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ডিপো বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কর্মচারীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। চীনের ব্যাংক গুলোতে বর্ষবরণের ছুটি থাকায় কোটি কোটি টাকা চীনে আটকা পড়েছে। যার ফলে আমরা যারা সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রয়েছি আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকা আটকা পড়েছে। অপরদিকে মজুদ করা কাঁকড়া ও কুচিয়া মারা যাচ্ছে। এ ধরণের নানা সমস্যার সম্মুক্ষীন কাঁকড়া ও কুচিয়া ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘ স্থায়ী হলে কোটি কোটি টাকা লোকসান ও ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতে হবে আমাদের। আমরা চাই সরকার চীন সরকারের সাথে কথা বলে দ্রুত রপ্তানির ব্যবস্থা করুক। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, এমন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সরকারের থেকে আমরা এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি। এটা মূলত বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের কাজ। তবে আমরা বসে নেই। বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছি। শুনেছি চীন সরকার আশ্বস্ত করেছে। আশা করছি দ্রুত আবারও রপ্তানি শুরু হবে এবং তাহলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads