• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডিপো চার্জ বৃদ্ধি নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি

প্রতীকী ছবি

আমদানি-রফতানি

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডিপো চার্জ বৃদ্ধি নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি

ক্ষুব্ধ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে বেসরকারি আইসিডির (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) চার্জ বাড়ানো নিয়ে আইসিডি মালিক ও স্টেকহোল্ডাররা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। দফায় দফায় বেঠক করেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারছে না দু’পক্ষ। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়িক সংগঠন ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মধ্যকার সভাটিও নিষ্ফলভাবে শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবারের বৈঠকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এমনিতেই পোষাকশিল্প রপ্তানির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং এ শিল্পের রপ্তানি কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে পোশাকশিল্পের কাঁচামালের দাম। এই অবস্থায় কন্টেইনার ডিপো চার্জ বাড়ানো হলে রপ্তানিতে ধস নামবে। তাদের দাবি ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এবং পোশাক রপ্তানি  ঝুঁকির মুখে রয়েছে। রপ্তানিকারকদের মতে, বাড়াতে হয় সেটা আগামী এপ্রিলের আগে কোনো চার্জ বাড়ানো যাবে না আর বাড়ালেও তা যৌক্তিক পর্যায়ে থাকতে হবে।

অপরদিকে বিকডা নেতৃবৃন্দ রপ্তানিকারকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে বলেছে, আমরা ঋণ করে ব্যবসায়ীদের সেবা দিচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে এ খাতের কোনো যৌক্তিক চার্জ নির্ধারণ হয়নি। অচিরেই চার্জ বৃদ্ধি না করা হলে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানান তারা। এছাড়া শিগগির আরেকটি বৈঠকের মাধ্যমে চার্জ কার্যকর করার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বিকডা কর্তৃপক্ষ। এদিকে দীর্ঘদিনেও ত্রিপক্ষের (মন্ত্রণালয়, সেবাদানকারী সংগঠন বিকডা এবং রপ্তনিকারক) মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ডিপোর চার্জ নির্ধারণটি অনেকটা অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে হাঁটছে।  

অন্যদিকে, রপ্তানিকারক ও বিকডা দু’পক্ষের অনমনীয় আচরণে ক্ষুব্ধ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, সভায় দু’পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও একজন অন্যজনের প্রতিপক্ষ মনে করে যে হইচই ও হট্টগোল করে তাতে সভায় সিদ্ধান্ত প্রদান করা দুরূহ। একদিকে রপ্তানিকারকরা বলছেন এ শিল্পের অবস্থা ভালো নয়। বিশেষ করে বিজিএমইএ  সভাপতি রুবানা হক এ মুহূর্তে পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির বিষয়ে আপত্তি তুলে বলেছেন, আগামী এপ্রিলে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে এই শিল্পের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরবেন তিনি। এছাড়া  রপ্তানিকারকদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে চার্জ বৃদ্ধি নাকি বিদ্যমান অবস্থা অব্যাহত থাকবে সে জন্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদানে আরো সময় নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। বন্দরের ওপর চাপ কমাতে বেসরকারি পর্যায়ে এসব আইসিডি প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বন্দর ইয়ার্ডের মতোই এসব প্রতিষ্ঠানে কনটেইনার স্টাফিং-আনস্টাফিং করা হয়। এছাড়া কনটেইনার জাহাজিকরণ এবং ডেলিভারিও আইসিডি কর্তৃপক্ষ করে থাকে।

এদিকে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম আইসিডির ডিপো চার্জ বিদ্যমান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়।  বর্ধিত চার্জটি ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুযায়ী এটা কার্যকরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। এমনকি প্রতি বছর ডিপোর চার্জ ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধির নিদের্শনাও ছিল। কিন্তু গত পাঁচ মাসে বর্ধিত ৫ শতাংশ কার্যকর করতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও চবক কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিদায়ী বছরের ১ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ এক তরফা চার্জ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা। এর আগেও তারা কয়েক দফায় চার্জ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই বন্দর ব্যবহারকারীদের বিরোধিতার মুখে  তা ব্যর্থ হয়।

বিকডার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার ৯০ শতাংশ এবং আমদানি পণ্যের ২১ শতাংশ হ্যান্ডলিং হয় এই ১৯টি আইসিডির মাধ্যমে। আইসিডিগুলো প্রতি বছর ৩ লাখ টিইইউএস আমদানি কনটেইনার, ৬ লাখ টিইইউএস রপ্তানি কনটেইনার এবং ৮ লাখ খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে। আর রপ্তানিকারকরা প্রতিবছর এ বাবদ আইসিডিগুলোকে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা চার্জ দিচ্ছে। এ চার্জ ১০ শতাংশ হারে বাড়লে বছরে তাদের ৮৫ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদের (আজ তার শেষ কর্মদিবস) সভাপতিত্বে বিআইডব্লিউটিসির ফেয়ারলি হাউসে এ-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে জানুয়ারির ২০ তারিখে আরেকটি বৈঠক হয়। সভায় নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, আমদানি-রপ্তানিকারকদের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। পাশাপাশি বিকডার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করাও দরকার। এছাড়া তিনি নিজ নিজ পক্ষের মুনাফা না দেখে দেশের স্বার্থে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণে বিবেচনার জন্য আহ্বান জানান।

জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, গত ছয় মাস ধরেই পোশাকশিল্প খাতের অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে। এ সময়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ২৯.৬৪ শতাংশ। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গেছে সেখান থেকে উত্তরণ  এ শিল্পের জন্য বেশ কঠিন। ইতোমধ্যে ৬৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণে নিমজ্জিত। 

সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সভা হলেও দু’পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণে ট্যারিফ বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চার্জ বৃদ্ধি নিয়ে সভাতে দু’পক্ষই মারমুখী অবস্থানে রয়েছে।  সবপক্ষই তাদের ক্ষতির কথাই বলেন। বিশেষ করে বিজিএমইএ এ ব্যাপারে বেশি সোচ্চার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বলছে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব এই শিল্পের  অবস্থা বর্তমানে নাজুক। এ অবস্থায় চার্জ বাড়ালে পুরো খাতে ধস নামবে বলে দাবি তাদের। আর বিকডা বলছে, তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সেবা দিচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চার্জ না বাড়ানো হলে সেবা কার্যক্রম বন্ধেরও হুমকি দিয়েছে তারা। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে রেফারির ভূমিকা পালন করছে। দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে এখানে কিছু করার নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads