• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
এডিপি বাস্তবায়ন গতি পায়নি আট মাসেও

এডিপিবার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)

ছবি : সংগৃহীত

রাজস্ব

এডিপি বাস্তবায়ন গতি পায়নি আট মাসেও

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০১৯

অর্থবছরের আট মাসের মাথায়ও প্রত্যাশিত গতি আসেনি সরকারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৭০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অর্থবছরের শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ হিসাবে অর্থবছরের আট মাসে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার আইএমইডির প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছিল ৬২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপির ৩৮ দশমিক ০১ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে। এ হিসাবে এবার অর্থ ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি শতকরা হিসাবেও এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। তবে অর্থবছরের শুরু থেকে প্রকল্পের পরিচালকরা (পিডি) অর্থ ছাড়ের সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আইএমইডি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রত্যাশিত গতি আসেনি এডিপি বাস্তবায়নে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকেও এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুরু থেকেই বাস্তবায়নে গতি আনতে বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরও এডিপি বাস্তবায়নে শেষের দিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে আরো ১ লাখ ১০ হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। আট মাসে ব্যয় করা অর্থের প্রায় ৫৬ শতাংশ ব্যয় করতে হবে শেষ দুই মাসে। এ অবস্থায় শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বেশকিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

আইএমইডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আট মাসে ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। সরকারি তহবিলের বাস্তবায়ন হার ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি তহবিল থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে এডিপিতে। এ বরাদ্দের ২৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে আট মাসে। এ হিসাবে বিদেশি সহায়তা বরাদ্দের ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পগুলোও এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত দেখানো হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এ খাতে চলতি এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আট মাসে ৩ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৪৫৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিভাগের ৯৫ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ২৫ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে আট মাসে বিদ্যুৎ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৪১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগের আওতায় থোকসহ বরাদ্দ রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে বাস্তবায়নের হার ৪৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

তালিকার তথ্য অনুযায়ী, আট মাসে মাত্র ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আর বরাদ্দের ৩০ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় করেছে ১৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। বড় বরাদ্দ পাওয়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ৩৭ প্রকল্পে বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ১০ হাজার ৭৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সেতু বিভাগের সাত প্রকল্পে ৯ হাজার ১৫৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা বিভাগের পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

অন্যদিকে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগসহ বেশকিছু মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads