• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কদর বাড়ছে বিশ্ববাজারে

বাংলাদেশের ওষুধের কদর বাড়ছে বিশ্ববাজারে

প্রতীকী ছবি

রাজস্ব

বাংলাদেশের ওষুধ

কদর বাড়ছে বিশ্ববাজারে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

বিশ্ববাজারে কদর বাড়ছে বাংলাদেশের ওষুধের। ফলে বাড়ছে রফতানি আয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৬৫ দেশে যাচ্ছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ওষুধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পর্যাপ্ত নীতি-সহায়তা পেলে তৈরি পোশাক খাতের মতো ওষুধ হবে দেশের রফতানি ব্র্যান্ড।

সূত্রগুলো বলছে, বিগত এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ওষুধ রফতানি। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে শুধু কিছু হাইটেক ওষুধ আমদানি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্লাড বায়োসিমিলার পণ্য, অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগ, ভ্যাকসিন।

সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ার প্রধান কারণ দাম বিশ্বের অন্যান্য ওষুধ রফতানিকারক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ওষুধের দাম অনেক কম। পরিসংখ্যান বলছে, উন্নত বিশ্বে যে ওষুধের দাম গড়ে ৪২৫ ডলার, বাংলাদেশে এর দাম মাত্র ৩২ ডলার। মানও খারাপ নয়।

সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ওষুধ আমদানিকারক দেশ থেকে রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত পেতে শুরু করেছে। সুনাম অর্জন করেছে দেশের ওষুধ বিদেশের বাজারে। দেশের ৫৪টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উন্নত বিশ্বের ইউরোপ ও আমেরিকাসহ ১৬৫ দেশে যাচ্ছে। 

বিশ্বে বর্তমানে ওষুধের রফতানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ বাজার ধরা গেলে এ খাতে রফানি আয় দাঁড়াবে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দেশের ওষুধের গুণগত মান ভালো এবং অন্য দেশের তুলনায় দাম কম হওয়ায় এটা অর্জন সম্ভব।

গত পাঁচ বছরে ওষুধ রফতানি বেড়ে ৪ কোটি ডলার হয়েছে, যা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। স্থানীয়ভাবে দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ উৎপাদন করে রফতানি আয়ে বিশাল অবদান রাখছে এই খাত। এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্ববাজারেও। দেশের ২৬৯টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বছরে ২৮ হাজার ১০ ব্র্যান্ডের ওষুধ বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মেয়াদে এই খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৯৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রথম নয় মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশের ওষুধশিল্পেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এই খাতে ছোট বড় শিল্পের সংখ্যা এক হাজারের কাছাকাছি দাঁড়াবে। 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ২০১৬ সালে জাতীয় ওষুধনীতি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১৬০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। ওষুধের কাঁচামাল দেশেই তৈরির জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২০০ একর জমিতে এপিআই পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে পাঁচ বছরমেয়াদি ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি ২০১৭-২০২২’। এ কর্মসূচিটি সফল বাস্তবায়ন হলে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’র স্বাস্থ্যবিষয়ক  সূচকগুলো অর্জনে এ উন্নয়ন কর্মসূচি বিরাট ভূমিকা রাখবে।

জানতে চাইলে জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোমিনুল হক গতকাল শুক্রবার টেলিফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের ওষুধ বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। তবে এই খাত থেকে রফতানি আয় এখনো সন্তোষজনক নয়। প্রবৃদ্ধি হলেও এখানে সরকারের কিছু নীতি সহায়তা জরুরি।

এই উদ্যোক্তা বলেন, আমাদের ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এর ওপর সরকার ৩০ শতাংশ কর আরোপ করছে। ফলে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছেন। ফলে প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। তাই এখানে সরকারের ছাড় দিতে হবে। আশা করি, নতুন বাজেটে এদিকে সরকারের নজর থাকবে।

জানা গেছে, ভারতের ব্যবসায়ীরা ওষুধ রফতানিতে নগদ সহায়তা পেয়ে থাকেন। অবশ্য বিগত বছর থেকে বাংলাদেশও ওষুধ রফতানির ওপরে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিতে শুরু করেছে।

সরকারের হিসাব বলছে, ২০০৯ সালে ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল রফতানি থেকে আয় ছিল ৩৪ কোটি টাকা। তখন বিশ্বের ৭৩টি দেশে যেত বাংলাদেশের ওষুধ। এরপর প্রতিবছর বাড়ছে দেশের ওষুধ রফতানি থেকে আয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ওষুধকে ঘোষণার ফলে এ খাতের সম্ভাবনা আরো নতুন মাত্রা পেয়েছে।

ওষুধের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে দেশেই কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি এপিআই পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। দেশের ৫০ বছরে ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তীতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার কোটি ডলার। আর ওষুধ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার। বর্তমানে দেশে ওষুধ খাতের আকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

গত ছয় বছরে ওষুধ রফতানি বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১১-১২ অর্থবছরে খাতটি থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং গত অর্থবছরে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৬ বছরে রফতানি বেড়েছে ৫ কোটি ডলার বা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এ সময় খাতটি কম বেশি হলেও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। তবে হারবাল খাতটিও এগিয়ে নিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads