• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
সিরাজগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল ৮ জনের

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট

প্রতীকী ছবি

দুর্ঘটনা

সিরাজগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল ৮ জনের

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

সিরাজগঞ্জে টংঘর সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আটজন নিহত ও একজন আহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে সদর উপজেলার কাদাই গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। আহত মো. মামুনকে (১৩) আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁশের খুঁটি দিয়ে নির্মিত বিদ্যুৎ লাইনে টানানো তারে লেগে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেছে, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে অকালে চলে গেল আটটি জীবন।

নিহতরা হলো- আবদুল কাদেরের ছেলে মো. আবদুল মোমিন (৩৫), মৃত হবিবুর রহমানের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৩২), মো. আবদুল হামিদের ছেলে মো. সানোয়ার হোসেন (৩০), আবদুল আলিমের ছেলে মো. সজীব মিয়া (১৪), আবু তাহেরের ছেলে মো. আবদুল্লাহ (১৬), মো. আমিনুল ইসলামের ছেলে মো. রাজু মিয়া (১৬), মেঘা শেখের ছেলে আবদুস সাত্তার (৫০), আবুল হোসেনের ছেলে মো. হাবিব (২৪)। নিহতরা সবাই সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নের কাদাই গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে চারজন তাঁত শ্রমিক, একজন ব্যবসায়ী ও তিনজন ছাত্র রয়েছে। এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

থানা পুলিশ ও নিহতদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত একটি টিনের টং ঘর ওই গ্রামের ১০-১২ জন লোক অন্যত্র স্থানান্তর করছিল। স্থানান্তরের সময়ে কিছু দূর নেওয়ার পর টিনের টং ঘরের ওপরের টিনের সঙ্গে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) (সাবেক পিডিবি) টানানো এলটি বৈদ্যুতিক লাইনের সঙ্গে স্পর্শ লাগে। এ সময় তার ফুটো হয়ে টিনের ঘরটি বিদ্যুতায়িত হলে সবাই আহত হয়। পার্শ্ববর্তী লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সিরাজগঞ্জ শহরের নেসকোর কার্যালয়ে ফোন করে জানায়। ২০ মিনিট পর লাইন বন্ধ করে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। পরে আহতদের মধ্যে ৯ জনকে গুরুতর অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আটজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে ওই গ্রামের এক শিক্ষক বলেন, বৈদ্যুতিক লাইনটি নিয়মবহির্ভূত বাঁশের সঙ্গে স্বল্প উচ্চতায় টানানো ছিল। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই আজ এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। এটি শুধুই দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না।

সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আটজন মারা যায়। একজনকে আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সে আশঙ্কামুক্ত। বিদ্যুতের স্পর্শে নিহতদের শরীরের অনেক অংশ পুড়ে গেছে। যে কারণে তারা দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নেসকোর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম মহিউদ্দীন বলেন, টিনের ঘরটি সরিয়ে নেওয়ার সময় টিনের সঙ্গে ঘর্ষণ লেগে তারের রাবার (ইনসুলেটর) উঠে গিয়ে ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বৈদ্যুতিক লাইনের বিষয়ে বলেন, ওই এলাকায় কিছু নিম্নমানের বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে। এগুলো পরিবর্তন করে লাইনগুলো আপগ্রেড করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অনুমতি আসেনি। যে কারণে লাইন পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসক কামরুন্নাহার সিদ্দীকা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads