• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ঈদযাত্রায় ২৩৭ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২৫৯ জনের 

দুর্ঘটনা কবলিত একটি বাস

সংগৃহীত ছবি

দুর্ঘটনা

ঈদযাত্রায় ২৩৭ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ২৫৯ জনের 

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঈদুল আজহা উদযাপনের আগে-পরে এবার ২৩৭ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৫৯ জন এবং আহত হয়েছে ৯৬০ জন। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৬ আগস্ট থেকে ঈদের পরে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১৩ দিনের এই পরিসংখ্যান দিয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতি জানাচ্ছে, গত ঈদুল আজহার তুলনায় এবার সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশবেড়েছে। আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।  

ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৮ প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১০টি সুপারিশও তুলে ধরে সংগঠনটি। 

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদযাত্রা শুরুর পর থেকে ঈদ শেষে ঢাকা ফেরার পথে মোট ২৩৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৫৯ জনের। গত ১৬ আগস্ট ১৩ দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জন, আহত ৪৬, ১৭ আগস্ট ২১ দুর্ঘটনায় নিহত ১৫, আহত হয় ৮৫ জন। দুর্ঘটনার ১৩ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ২০ আগস্ট। ওইদিন ৩০টি দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৪৫ জনের আর আহত হয় ১০০ জন। পরপর আরো দুই দিনে ২৩ ও ২৪ জন মারা যায়। 

তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ জন, ৪ জন চিকিৎসক, দুজন প্রকৌশলী, দুজন সাংবাদিক, দুজন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, ৪২ চালক ও হেলপার, ৫৯ নারী, ৩৪ শিশু ও ৮ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হয়। 

এবারের দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ বাস, ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ নসিমন-করিমন, ৫ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ অটোরিকশা, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ অন্যান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত। দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১ দশমিক ১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ১ দশমিক ২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ঘটে। 

একই সময়ে এবার রেলপথে ১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫ জন ও আহত ৭ জন এবং নৌপথে ১৪টি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪ জন আর আহত হয়েছে ৬৮ জন।  

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকায় রেজাউল করিম রনি নামে এক যুবককে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। ময়মনসিংহের নান্দাইলে লেগুনা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় ৪ যাত্রীকে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পুলিশ, র্যাব, বিআরটিএ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় ঈদুল ফিতরের তুলনায় দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং আহত ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ কমেছে বলেও জানান মোজাম্মেল হক। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আবদুল হক। 

‘জবাবদিহিতার অভাব’কে সড়কের মূল সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা সব দেশেই হয় কিন্তু আমাদের দেশে অদক্ষ চালক, রেষারেষি এবং চালকের স্বেচ্ছাচারিতায় যে দুর্ঘটনা ঘটছে সেটি মেনে নেওয়া যায় না। এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে যেগুলোর অর্ধেক চাইলে এড়ানো যেত। সরকারের দুজন মন্ত্রীর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির শীর্ষ পদে থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যারা নীতি নির্ধারণ করেন, তারাই আবার মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি। জবাবদিহিতার ব্যাপারে যে অনাগ্রহের মূলে রয়েছে এই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। 

দুর্ঘটনা রোধে ১০ সুপারিশ : সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন দুর্ঘটনা রোধ ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমিয়ে আনতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। গত ৪ বছর ধরে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ৭টি বিষয় পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতার আলোকে এ সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সুপারিশগুলো হলো- সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে রোড সেইফটি ইউনিট গঠন করে নিয়মিত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলার জন্য সরকারি খরচে ‘চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ চালু। নিয়মিত রাস্তার রোড সেইফটি অডিট করা। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা। মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা। মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন। ভাঙা রাস্তা সংস্কার করা। ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাথ, ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads