• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
কাঁদছে রক্তভেজা স্কুলব্যাগ, বই-খাতা

ছবি : সংগৃহীত

দুর্ঘটনা

স্বপ্ন পিষে গেছে পিচঢালা পথে

কাঁদছে রক্তভেজা স্কুলব্যাগ, বই-খাতা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

দুটি স্কুলব্যাগ পড়ে আছে সড়কে। একটি লাল, আরেকটি সবুজ আর কালো মেশানো। ব্যাগ দুটির পাশেই পড়ে আছে দুটি নিথর দেহ। তখনো ছোট্ট শরীর দুটি থেকে বয়ে যাচ্ছে রক্তের ধারা। সড়কের কালো পিচে বোনের রক্তে মিশে যাচ্ছে ভাইয়ের রক্ত। ভাইটির মাথার কাছেই পড়ে আছে বোনের শরীরের এক অংশ। বোনটির দু-পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরোপুরি। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাংসপিণ্ড। পড়ে আছে একটি নম্বর প্লেট, মোটরসাইকেলের ভাঙা টুকরো। উৎসুক জনতা জটলা করে দেখছে এসব।

দৃশ্যটি সোমবার বেলা ১১টার কিছু পরের, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মোল্লারপুল এলাকায়। মোটরসাইকেল আরোহী কেরানীগঞ্জের কসমোপলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসার হোসেন ও তার বোন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিমা আফরিনকে চাপা দিয়ে চলে গেছে একটি ট্রাক। মুহূর্তেই নিভে গেল দুটি স্বপ্নের দীপ। ওদের বাবা হাসপাতালে  মৃত্যুশয্যায়।

ওই দুই ভাই-বোনের মতো প্রতি দিনই আরো প্রাণ সংহার করেই চলেছে ‘যন্ত্রদানব’। তার নিষ্ঠুর নৃশংসতায় হাজারো স্বপ্ন পিষে যাচ্ছে পিচঢালা পথে, মিশে যাচ্ছে মাটিতে। স্বজনের কান্নায় ভারী হচ্ছে বাতাস, বুকফাটা আর্তনাদে কেঁপে উঠছে চারপাশ। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দেখতে দেখতে বিবেকও বোধহীন হচ্ছে। কিন্তু যন্ত্রদানব থামছে না। পথচারী, ঘুমন্ত শ্রমিক, স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী কারো রেহাই নেই। প্রতিদিনই কারো না কারো প্রাণ ঝরছে সড়কে।

ওই দুই সহোদরও তেমনি নৃশংসতার শিকার। ঘটনার প্রতিবাদে ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ৪০ মিনিট অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা।

মো. আলীমুজ্জামান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাবা কালিম হোসেন স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় প্রিয়াঙ্গণ আবাসিক প্রকল্পের গেটের সামনে মালবোঝাই একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে পিষ্ট হয়ে আফসার (৭) ও আফরিন (৯) নামে দুই ভাইবোন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

তিনি জানান, ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে মোটরসাইকেল চালক তাদের বাবা কলিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

স্কুলের শিক্ষক রাবেয়া বশরী বলেন, স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উৎসব ছিল। খেলা শেষে শিশুদের বাবা তাদের নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তাদের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন রাজেন্দ্রপুরের পুরাহাটি এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পথে রাজেন্দ্রপুর মোল্লারপুল এলাকায় একটি ট্রাক তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভাই-বোন নিহত হয়। আর বাবা গুরুতর আহত হয়।

এর প্রতিবাদে ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ইকুরিয়া এলাকায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সামনে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহজামান জানান, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষার্থীরা। ধলেশ্বরী সেতুর কাছে রডভর্তি ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। চালক ও হেলপারকে আটকের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads