• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
থামছে না যন্ত্রদানব

থামছে না যন্ত্রদানব

ছবি : সংগৃহীত

দুর্ঘটনা

বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজছাত্রসহ নিহত ৭

থামছে না যন্ত্রদানব

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে বাসচাপায় হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে এবার সড়কে প্রাণ হারালেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিম। এ ছাড়া গাজীপুরেও দুই কলেজছাত্রসহ রাজধানীর ডেমরা, মুন্সীগঞ্জ ও জয়পুরহাটে আরো ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিমসহ মোট ১১ শিক্ষার্থী হবিগঞ্জের দেবপাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তারা ময়মনসিংহ-সিলেট রোডের উদার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। ভাড়া নিয়ে বাসচালকের সহকারীর সঙ্গে তাদের বিবাদ হয়। একপর্যায়ে বাসের চালকের সহকারী ওয়াসিমসহ আরেকজনকে ধাক্কা দেয়। এতে ওয়াসিম বাস থেকে পড়ে যান এবং চাকা তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। আরেকজন বাস থেকে লাফ দিয়ে নামেন। বিকাল ৫টায় মৌলভীবাজারের শেরপুর বিশ্বরোডে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওয়াসিমকে দ্রুত প্রাইভেটকারে করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাস্তায় মৃত্যু হয় তার। আরেকজন শিক্ষার্থী রাকিব হোসেনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওয়াসিম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওয়াসিম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের ঘোরী মো. আবু জাহেদ মাহবুব ও ডা. মীনা পারভিন দম্পতির ছেলে। ঘটনার পরপরই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসটি আটক করেন। ততক্ষণে বাসের চালক, হেলপার পালিয়ে যায়। পরে মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশ বাসটি জব্দ করে।

গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরের সালনা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তাদের এক বন্ধু ও এক শিশু। নিহতরা হলেন চান্দনা চৌরাস্তার লিংকন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র গাজীপুর মহানগরের মাস্টারবাড়ী এলাকার জুম্মান হোসেন নাছির (১৮) ও ভীমবাজার এলাকার বাসিন্দা রবিন (২২)। আহতরা হলেন একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও দক্ষিণ বাউপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আলামিন (১৮) এবং আসোয়াত (১১)।

গাজীপুর সদর থানার উপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম জানান, মহানগরের ইটাহাটা এলাকার লিংকন কলেজ থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে তিন বন্ধু বাড়িতে যাওয়ার পথে দুপুর পৌনে ১টার দিকে দক্ষিণ সালনা এলাকায় কনকর্ড গার্মেন্টসের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উল্টোপথে আসা একটি অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী ছিটকে মহাসড়কের ওপর পড়ে যান। এ সময় ময়মনসিংগামী সৌখিন পরিবহনের একটি বাস কলেজছাত্র নাছিরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। নাছিরের সহপাঠী আহত রবিনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল আরোহী আলামিন এবং অটোরিকশাযাত্রী শিশু আসোয়াত আহত হন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঢাকা : রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় আবদুস সালাম (৪৫) নামের এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড়টার দিকে মারা যান সালাম। তার বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ গ্রামে। যাত্রাবাড়ীর কাজলা নতুন রাস্তা এলাকায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন সালাম।

তার ফুফাতো ভাই শামীম জানান, সকালে একটি মাদরাসার অনুষ্ঠানের মাইকিং করতে বের হন সালাম। পরে সারুলিয়া এলাকায় গেলে ট্রাকের ধাক্কায় আহত হন তিনি। ডেমরা থানার দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক আবদুল ওহাব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এই ঘটনায় ট্রাকচালক জুনায়েদকে (১৯) আটক ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে উল্টোপথে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে পিষে দিয়েছে বনফুল পরিবহনের একটি বাস। ঘটনাস্থলেই অনন্ত নামের ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বাসটি আটক করতে পারলেও তার চালক ও সহকারী পলাতক। বনফুল পরিবহনের ওই বাসটি ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল করে বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী অনন্ত উত্তর মেদিনীমণ্ডল এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী রাজা মিয়ার ছেলে। সে আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মেদিনীমণ্ডল এলাকা দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল অনন্ত। এ সময় বেপরোয়া বনফুল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি উল্টোপথে গিয়ে শিক্ষার্থী অনন্তকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সে। সহপাঠীর মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসে। পরে তাদের অবরোধে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

জয়পুরহাট : পাঁচবিবি-কামদিয়া সড়কের বিদ্দিগ্রাম এলাকায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপর এক মোটরসাইকেল আরোহী। গতকাল শনিবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন পাঁচবিবি উপজেলার পানিয়াল গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে তবিবর রহমান (৫৫) ও দানেজপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মাহফুজার রহমান (১৭)। গুরুতর আহত হন একই উপজেলার বালিঘাটা গ্রামের ভরৎ গোয়ালার ছেলে রাতুল গোয়ালা (২৩)। তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলার রহমান জানান, রাতুলকে মোটরসাইকেলে নিয়ে পাঁচবিবি-কামদিয়া সড়কে যাচ্ছিলেন মাহফুজ। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেল চালক তবিবরের সাথে মোটরসাইকেলের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তবিবর মারা যান। গুরুতর আহত মাহফুজ ও রাতুলকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মাহফুজ মারা যান। আর রাতুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads