• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসি বিস্ফোরণ

প্রতীকী ছবি

দুর্ঘটনা

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসি বিস্ফোরণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০১৯

রাজধানীর শনিরআখড়ায় গত ১০ জুন এসি বিস্ফোরণে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। গত ২৬ মে গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ী এলাকায় একটি সোয়েটার কারখানায় এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। গত ২৫ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী মারা যান। এ ছাড়া ২০১৭ ও ২০১৬ সালে একাধিক এসি দুর্ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে।

এমনসব দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তখনই এর কার্যকারণ খোঁজা হয়। তখন আসে নানা কথা। এর মধ্যে গত সোমবার শনিরআখড়ার ঘটনার পর এসি বিস্ফোরণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি বিস্ফোরণ। তাদের মতে, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।

অন্যদিকে এসির বিস্ফোরণ এড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করছে। এতে ৭টি বিষয়ে নজর রাখতে আহ্বান জানানো হয়। প্রথমত, ২৪ ঘণ্টা এসি চালু না রাখা। বলা হচ্ছে, দীর্ঘ সময় চালু থাকলে এসির যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। এজন্য মাঝেমধ্যে এক-দুই ঘণ্টা এসিকে বিশ্রাম দিতে হবে। বছরে অন্তত একবার প্রফেশনাল টেকনিশিয়ান দিয়ে এসির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করাতে হবে। মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ফল্টের কারণে যে কোনো সময় আগুন ধরে যেতে পারে।

নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের বার্তায় বলা হয়, খেয়াল রাখতে হবে এসির ভেতর কিছু জমাট বেঁধে যেন না যায়। এসির এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এই ফিল্টার পরিষ্কার বা পরিবর্তন এসি রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এসির ওয়্যারিং পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি বলা হচ্ছে। এসির কাজ করার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে। অনেক সময় বজ্রপাতেও এসি বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য হাই ভোল্টেজ এড়াতে ভবনের ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিম্নমানের নকল এসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া গরমের শুরুতে এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার- এসবের অবস্থা ঠিকমতো পরীক্ষা করতে হবে। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর চালু করতে গেলে এসির সংযোগ তার পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

এসবের মধ্যে এসি বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে এসির যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। এসব মানহীন যন্ত্রাংশই শহরের বিভিন্ন অনুমোদনহীন কারখানায় দামি ব্র্যান্ডের নাম লাগিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। তিনি জানান, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর প্রায়ই নকল এয়ারকন্ডিশন আটক করে। আটকের পর দেখা যায়, সেগুলোতে নামি ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করা হলেও মূলত সেগুলো নিম্নমানের। এসব নিম্নমানের এসিতেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বেশি।

দেশের নামি একটি যন্ত্রাংশ কোম্পানির কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এসির প্রেসার বেড়ে গেলে কম্প্রেসার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। অনেক সময় বার্নেবল গ্যাসের কারণেও ঘটতে পারে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা। নিয়ম করে ভালো মানের টেকনিশিয়ান দিয়ে এসির সার্ভিসিং করানো উচিত। রক্ষণাবেক্ষণ না করলেও অনেক সময় সংযোগস্থলে ধুলোবালি জমে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যেটা সব সময় চেকআপে রাখতে হয়। আবার বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াও এসি বিস্ফোরণের একটি কারণ। এ জন্য ভবনগুলোর ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা রাখা উচিত।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, এসির মধ্যে কম্প্রেসার থাকে। এই কম্প্রেসারের গ্যাসের প্রেসার লেভেলের দুটি লিমিট থাকে- সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন। প্রেসার সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করলে এসি বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, এসির মধ্যে গ্যাস দেওয়া হয়। এটি দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে না। কিন্তু কোনো কারণে বিস্ফোরণ প্রতিরোধের জন্য যেসব সেন্সর থাকে, সেগুলো কাজ না করলেও এসি বিস্ফোরিত হতে পারে। এসি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বিকল্প নেই বলে মত দেন ড. মোহাম্মদ আলী।

মজার কিংবা কষ্টের বিষয়, এসি বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানেন না বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘কেন বিস্ফোরণ ঘটে, এটা যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। আমরা এ বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞ নই।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসি বিস্ফোরণের কারণ নিয়মিত সার্ভিসিং না করা। সার্ভিসিং না করায় পানি ও গ্যাস জমে যায়। তখন বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বলেন, সার্ভিসিং করালেও অনেকে ভালো টেকনিশিয়ান দিয়ে সার্ভিসিং করান না। তাই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে সবাইকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads