মিরপুরের রূপনগরে চলন্তিকা মোড়ের পাশের ঝিলপাড়ের বিশাল বস্তিতে লাগা আগুনে সহস্রাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বস্তির আগুন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বস্তিটিতে আগুন লাগে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বস্তিটি কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার লম্বা। এতে হাজার হাজার ঘর ছিল। এর প্রায় সবই পুড়ে ছাই হয়েছে।
এদিকে, আগুনে পুড়ে নিঃস্ব সবাইকে সরকার সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। চলন্তিকা মোড় থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকা পর্যন্ত ঝিলের ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বস্তিটি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুনের ব্যাপকতা দেখে পরে আরও ইউনিট বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত ২৪টি ইউনিট কাজ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বলেন, বস্তিতে দুই থেকে আড়াই হাজার ঘর ছিল। প্রায় সব ঘরই পুড়ে গেছে।
আগুন লাগার কারণ এখনও জানাতে পারেনি কোনও সূত্র। তবে কেউ কেউ ধারণা করছেন,বস্তির কোনও ঘর থেকে রান্না করার সময় অসাবধানতাবশত আগুন লাগে। পরে তা দ্রুত পুরো এলাকায় ছড়িয়ে যায়।তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। তবে কোনও পক্ষই এসব তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। আগুন নেভাতে ব্যস্ত থাকায় ফায়ার সার্ভিস এসব বিষয়ে কোনও বক্তব্য এখনও দেয়নি। ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মিরপুরে বস্তিতে আগুন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আগুন লাগার খবর শুনে বস্তির সব মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। অনেকে ঘরের মালপত্র সরানোর চেষ্টা করেও আগুনের উত্তাপের কারণে পারেননি। পরিবার সদস্যদের নিয়ে বের হতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। তাদের অনেককে আশেপামের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন স্বজনরা। কয়েকজন বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অনেককে পড়ে গিয়ে বা আগুনের আঁচে আহত হতে দেখেছেন তারা। এসময় তীব্র ধোঁয়ার সৃষ্টি হওয়ায় অনেকে অসুস্থ হন। বস্তিটির বেশিরভাগ বাসিন্দা পোশাক শ্রমিক ছিলেন বলে জানিয়েছে অনেকে।
এদিকে,মিরপুরের বস্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান আগুনে ২৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা করা হবে। বাউনিয়া বাঁধে বস্তিবাসীর জন্য আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে বস্তিবাসীদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের কারণ নির্ণয় করা হবে বলেও জানান তিনি।