• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ঈদযাত্রায় ২৪৪ দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৩, আহত ৯০৮

ছবি : সংগৃহীত

দুর্ঘটনা

যাত্রীকল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলন

ঈদযাত্রায় ২৪৪ দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৩, আহত ৯০৮

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ আগস্ট ২০১৯

ঈদযাত্রায় এবার সড়ক, নৌ ও রেলপথে ২৪৪টি দুর্ঘটনায় মোট ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছে। ঈদের আগে ও পরে ১৩ দিনে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি।

এ সময় আরো জানানো হয়, ঈদের আগে যেভাবে প্রশাসনের মনিটরিং ছিল ঈদের পর ঠিক সেভাবে মনিটরিং না থাকায় ঈদের পর দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদের আগে থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যানবাহন ও চালকদের বিরতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ঈদের আগের তুলনায় এখন আরো বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে গত বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ৬.৪০ শতাংশ, নিহত ৬.২৫ শতাংশ ও আহত ১.৫০ শতাংশ কমেছে। এ বছর মোট সংঘটিত ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনার ৬৭টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। যেখানে মোট নিহতের ৩৪.৩৭ শতাংশ এবং মোট আহতের ৮.৪২ শতাংশ। অন্যদিকে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ৫২.২১ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৮৫.২১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে ফেরা (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত ১৩ দিনে ২৪৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩৭ জন চালক, ৩ জন শ্রমিক, ৭০ জন নারী, ২২ জন শিশু, ৪২ জন ছাত্রছাত্রী, ৩ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৩ জন রাজনৈতিক নেতা, ৯০০ জন যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ৪১টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং ১১টি অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

উল্লিখিত সময়ে রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ১১টি, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে একটি, ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষে একটি, ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার একটি ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌপথে ২৪টি ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৫৯ জন নিখোঁজ ও ২৭ জন আহত হয়েছেন।

গত চার বছরের পবিত্র ঈদুল আজহায় ঈদযাত্রায় সড়কপথে দুর্ঘটনার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ১৯৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৪৮ জন, আহত এক হাজার ৫৫ জন, ২০১৭ সালে ২১৪ দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৪ ও ৬৯৬ আহত, ২০১৮ সালে ২৩৯ দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৯ জন, আহত ৯৬০ জন এবং এবারের ঈদুল আজহায় ২৪৪ দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৩ জন, আহত ৯০৮ জন। দুর্ঘটনার পাশাপাশি নিহতের সংখ্যা কমেছে।

সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৭.৪ শতাংশ বাস, ২৬.৩৩ শতাংশ মোটরসাইকেল ১৬.৪ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, লরি, ৭.৮২ শতাংশ কার-মাইক্রো, ১৩.৫২ শতাংশ অটোরিকশা, ৩.৫৫ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৪.৯৮ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২.২১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৯.৮৫ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

মোজাম্মেল হক বলেন, গত ঈদের চেয়ে এবার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল। নৌপথে বেশ কিছু নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে, রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন রেল-বগি সংযুক্ত হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, যানজটের ভোগান্তি, রেলপথের শিডিউল বিপর্যয়, টিকিট কালোবাজারি এবং ফেরি পারাপারের ভোগান্তিসহ নানা কারণে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, বিরামহীনভাবে যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা এবং ঈদফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা রোধে ১২টি সুপারিশও তুলে ধরেছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি। এগুলো হচ্ছে—চালক প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স ইস্যু পদ্ধতি আধুনিকায়ন, যানবাহনের ফিটনেস প্রদান পদ্ধতি আধুনিকায়ন, রাস্তায় ফুটপাত ওভারপাস আন্ডারপাস নির্মাণ ও জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করা, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, চালক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা, মহাসড়কে ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেনের ব্যবস্থা, মোটরসাইকেলের ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধের আদেশ শতভাগ কার্যকর, সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে যেসব সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়ন করা, ঈদের আগের মতো ঈদের পরও মহাসড়কে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার রাখা, চালক শ্রমিকদের যুগোপযোগী বেতন-বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা এবং যানবাহনের যাত্রার আগে ত্রুটি পরীক্ষা করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, কনসাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল ও যাত্রীকল্যাণ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান তাওহিদুল হক লিটন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads