• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

দুর্ঘটনা

কুমিল্লার সড়ক - মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল, বছরে চার শতাধিক মৃত্যু

  • খায়রুল আহসান মানিক, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কুমিল্লার সড়ক - মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। গত এক বছরে এই অঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কে চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের সূত্র মতে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কুমিল্লা অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৩৫৭ জন। তবে কুমিল্লার সব আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ হাইওয়ে পুলিশ দেখছে। এছাড়া এ সকল সড়কের কিছু অংশ ও উপজেলা সড়ক গুলো হাইওয়ে পুলিশের বাইরে। সেগুলো দেখছে জেলা পুলিশ।

এ দিকে স্থানীয়রা দুর্ঘটনার পর পরই সড়ক থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনায় আহত নিহতের সব হিসাব পুলিশ ও মিডিয়ার হাতে আসছে না। জেলায় বছরে নিহতের সংখ্যা ৪০০ জন ছাড়িয়ে যাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা - নোয়াখালী, কুমিল্লা - চাঁদপুর ও কুমিল্লা - সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা হচ্ছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার সদর দক্ষিণে উল্টোপথে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চাপায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের সানন্দ গ্রামের সাদেকে মিয়ার ছেলে মোঃ কাজল হোসেন (২৮), লালমতি গ্রামের হুমায়ুন কবির মুন্সীর ছেলে তৌকির আহমেদ সজল (২৭) ও আবদুল লতিফের ছেলে শাহীন হোসেন (২৬)। কাজল বিজয়পুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সজল অর্থ সম্পাদক এবং শাহীন সদস্য ছিলেন। হাইওয়ের পাশে অবস্থিত হোটেল নুর জাহান থেকে রং সাইডে আসা শ্যমলী পরিবহনের একটি বাস ইউ টার্ন করতে গিয়ে ওই তিন মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেয়।

এদিকে ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুইটি কাভার্ড ভ্যানের দুইজন হেলপার নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় হাইওয়ের পুলিশের এ এস আই আক্তার হোসেন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দুইজন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সৈয়দপুরে দুইটি দুর্র্ঘটনা ঘটে। এ এস আই আক্তার হোসেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বাসিন্দা। নিহত হেলপার দুইজন হচ্ছেন নোয়াখালীর সেনবাস উপজেলা সদরের সালেহ আহমেদের ছেলে ফাহাদ ও লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার নন্দী গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে সুমন। অপর দিকে ১৮ আগস্ট কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার সংলগ্ন জামতলীতে বাস ও সি এন জি অটোরিক্সার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জনসহ ৮ জন নিহত হয়। ওই দুর্ঘটনায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঘোড়াময়দান গ্রামের নিহত জসিম উদ্দিনের পরিবারের বেঁচে যাওয়া একমাত্র সদস্য রিফাত (৮) এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতরা হলেন, কুমিল্লা নগরীর গোয়ালপট্টির বন্ধন নামের খাবার হোটেলের মালিক ও জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঘোড়াময়দান গ্রামের আবদুল জাব্বারের ছেলে জসিম উদ্দিন (৪৮), তার স্ত্রী শিরিন আক্তার (৪০), মা ছকিনা বেগম (৬৫), ছেলে শিপন (১৯), হৃদয় (১৬), কুমিল্লা হাইস্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র নিপুন (১২), দোকান কর্মচারী একই উপজেলার পাটোয়ার গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে সাইমুন (১৪) ও করপাতি গ্রামের জিতু মিয়ার ছেলে অটোরিক্সা চালক জামাল উদ্দিন (৩৫)। ঈদের ছুটি কাটিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে কুমিল্লা নগরীতে ফিরছিলেন জসিম। নিহত জসিম উদ্দিনের ভাই মোঃ মহসিন জানান, আমরা রিফাতকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। মানুষের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। গত এক মাসেও তিশা ট্রান্সপোর্টের মালিক আমাদের একটা ফোনও দেয়নি। রিফাতের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা দোষীদের সাজা চাই।

কুমিল্লার মানবাধিকার সংগঠক আলী আকবর মাসুম বলেন, একই পরিবারের ৬ জনসহ ৮ জন নিহতের ঘটনা মর্মান্তিক। ওই দুর্ঘটনায় রিফাত নামের একটি ছেলে বেঁচে আছে। বাস মালিক কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনা করে ছেলেটির পাশে দাঁড়াতে পারে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার আইন গুলোর যথাযথ প্রয়োগ হলে দুর্ঘটনা কমবে। হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ফিট গাড়ির ফিট চালকের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা গতি কমানোর বিষয়ে স্পিড গান ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। দুর্ঘটনায় জড়িত চালক - হেলপারদের গ্রেপ্তার করছি। তবে চালক, মালিক, যাত্রী সবার সচেতনাতা ছাড়া দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads