• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত আরও দুই শিশুর মৃত্যু

সংগৃহীত ছবি

দুর্ঘটনা

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত আরও দুই শিশুর মৃত্যু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৯

রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় বেলুনে ভরার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত আরও দুই শিশু মারা গেছে।

বুধবার দিবাগত মধ্যরাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যায়।

রূপনগর থানার থারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, এ ঘটনায় মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু নিহাদ ও পঙ্গু হাসপাতপালে চিকিৎসাধীন শিশু রিয়ার মৃত্যু হয়েছে।

তিনিবলেন, রিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। একই উদ্দেশ্যে নিহাদের মরদেহটি ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত বাকি ৫ শিশু হলো- শাহিন (১০), নূপুর (৭), ফারজানা (৯), জান্নাত (১৪) ও রমজান (৮)।

এদিকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদকে (৩০) প্রধান আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ঢামেকে পুলিশি প্রহড়ায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি ভ্যানগাড়িতে করে ওই ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতেন। গতকাল বিকালে রূপনগর ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় ফজর মাতবরের বস্তির সামনে বেলুন বিক্রি করতে আসেন তিনি। তাকে দেখামাত্রই বস্তির শিশুরা ঘিরে ধরে। এ সময় সিলিন্ডারে পাউডার জাতীয় কিছু একটা ভরছিলেন ওই বেলুন বিক্রেতা। এর পরপরই হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১০-১২ জন প্রায় ১৫ ফুটের মতো ছিটকে পড়েন। বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে চার শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া যায়। পেটে আঘাত পাওয়া আরেক শিশু দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই সে লুটিয়ে পড়ে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরণের স্থান থেকে কিছুটা দূরে আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওই বেলুন বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি তাকে চলে যেতে বলি। এরপর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে তিনি একটি টিনশেডের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই।’ বিস্ফোরণে বিকট শব্দ হলেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।

বিস্ফোরণে আহত নারী জান্নাত বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম জানান, বিকালে বাজার করে ফেরার সময় ১১ নম্বরের সড়কের মাথায় আসতেই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে তার স্ত্রীর ডান হাতের একটি অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

মিন্টু নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপর কালো ধোঁয়া। আমি এসে দেখি লাশ। সবাইকে ধরতে বললাম, ১৪ জনকে আমি সুরক্ষা করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এ ছাড়া আরো আহত ছিল। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এক নারীর হাত ছিন্ন হতে দেখছি। ওই নারীর নাম জান্নাত। তিনি বাজারে যাচ্ছিলেন। অনেক শিশুর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। সিলিন্ডারের বিস্ফোরিত অংশ, টিন, ইটভাঙা শিশুদের শরীরে গেঁথে ছিল।’

আহত জান্নাতের দেবর মনির হোসেন বলেন, ‘ভাবি (জান্নাত) বাসাবাড়িতে কাজ করেন। মাদবরের বস্তিতে থাকেন। কাজ থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।’ আরেক আহত শিশু সিয়ামের মামা আরিফ জানান, সিয়ামের বাবা তোফাজ্জল কাঁচামাল বিক্রেতা। ঘটনাস্থলের পাশে রাস্তায় বসে সবজি বিক্রি করেন। পাশের বস্তিতে তাদের বাসা। সিয়াম স্থানীয় স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে তার বাবার দোকানে গিয়েছিল। সেখানে সে আহত হয়।

আহত এক রিকশাচালক জুয়েলের স্ত্রী রূপা দাবি করেছেন, তার স্বামী ওই সময় রিকশা নিয়ে সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে আহত হন। বিস্ফোরণের শব্দে জুয়েল পড়ে যান বলে জানান তিনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহগুলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads