• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কোরবানির পশু নিয়ে হতাশ খামারিরা

ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীর হাটে আসছে গরু। ছবিটি যাত্রাবাড়ী থেকে তোলা

ছবি-বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

গত বছরের তুলনায় দাম কম

কোরবানির পশু নিয়ে হতাশ খামারিরা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ১৪ আগস্ট ২০১৮

দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কোরবানির পশুর খামারে বেপারিদের আনাগোনা বাড়ে ঈদের দুই-তিন সপ্তাহ আগে থেকেই। তবে এ বছর সে সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল দেশ। গ্রামগঞ্জের কোরবানির হাটসহ খামারগুলো ছিল ক্রেতাশূন্য। ফলে শুরু থেকেই মন্দা চলছে এ বছরের কোরবানির পশুর হাট। এতে পালিত গবাদিপশুর দাম না পেয়ে হতাশ খামারিরা।

তারা বলছেন, দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে গবাদিপশু আসছে। ফলে এখন প্রত্যন্ত এলাকার বাজারগুলো আগের তুলনায় কিছুটা জমে উঠলেও বাড়তি সরবরাহের চাপে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি মাঝারি সাইজের গরু এখন বিক্রি হচ্ছে গত বছরের থেকে ৫-১০ হাজার টাকা কম দামে। আর বড় গরুর দাম ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হয়েছে। ফলে অনেক খামারি লোকসান দিয়ে গবাদিপশু বেচতে বাধ্য হচ্ছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এখন বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর দাম। তবে এ বিষয়ে কয়েক খামারি জানান, তারা যে পশুগুলো বিক্রি করেছেন সেসব এখন বেপারিদের হাতে। বিভিন্ন এলাকায় কম দামে পশু কিনে মধ্যস্বত্বভোগীরা এখন দাম বাড়াচ্ছে। এতে খামারিদের কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ খামার থেকে তিন-চতুর্থাংশ গবাদিপশু বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে।  

এদিকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারের চোরাই পথে আসা গরুর আধিক্য রয়েছে। সীমান্ত পার্শ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, ওই এলাকার বিভিন্ন হাটবাজারে দেশি গরুর চেয়ে ভারতীয় গরুর সংখ্যাই বেশি। যদিও সীমান্তের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বক্তব্য ভারত থেকে কোনো গরু আসছে না। অপরদিকে গত শনিবারের পর মিয়ানমার থেকেও প্রচুর গরু-মহিষ আমদানি হচ্ছে।

জয়পুরহাট, দিনাজপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গত প্রায় ১৫ দিন যাবৎ চোরাই পথে প্রচুর গরু আসছে। এতে হঠাৎ করেই আশপাশের হাটে আশঙ্কাজনকভাবে পশুর দাম পড়ে গেছে। বর্তমানে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর, হিলি, গোবিন্দগঞ্জ, গোপীনাথপুর ও আক্কেলপুরের বড় হাটগুলোতে দেশি গরুর চেয়ে ভারতীয় গরুই বেশি। আর ভারতীয় গরু বেশি মোটাতাজা এবং দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা সেদিকেই বেশি ঝুঁকছে। ফলে বিপাকে পড়ছেন দেশি খামারিরা। চোরাই গরুর কমমূল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে অনেক খামারিকে তাদের পালিত গরু লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

অপরদিকে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য পশুর হাটে আগের বছরগুলোর মতো ক্রেতার আনাগোনা নেই। ফলে গত বছরে যেসব মাঝারি সাইজের গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তা খামারিরা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। আর গত বছর বড় সাইজের ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া গরুর দাম এবার ৭৫ হাজার টাকায় নেমেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মূলত স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেপারিরা শহরে কোরবানির হাটে পাঠানোর জন্য এসব গরু কিনছেন। এসব গরু মূলত রাজধানী ও বড় শহরে পরবর্তী সময়ে চড়া দামে বিক্রি হয়। মুনাফা যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।

উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জে সর্বাধিক পশুর খামার রয়েছে। ওই জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খামারি এজাজউদ্দিন বলেন, গোখাদ্য, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বাড়ায় প্রতিটি গরুর পেছনে খরচ বেড়েছে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। অথচ গত কয়েক দিন এ অঞ্চলে গরুর দাম কম ছিল। এতে লাভ তো দূরের কথা খরচও উঠছে না। তবে এখন বাজার কিছুটা চাঙ্গা হচ্ছে বলে জানান এ খামারি।

দেশের এসব এলাকার পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের খামারগুলোতেও খোঁজ নিয়ে একই অবস্থার কথা জানা গেছে। এ বছর ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ৪৩ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু পালন করা হয়েছে। যদিও এসব পশুর অধিকাংশ কোরবানির কয়েক দিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় বাজার খারাপ থাকার প্রভাবে তারাও এ বছর দাম কম পাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আল-আইমান অ্যাগ্রোর তত্ত্বাবধায়ক শাওন আহমেদ বলেন, সারা দেশে গরুর দাম কম থাকলে রাজধানীর পশুর হাটেও তার প্রভাব পড়বে। এতে খামারিদের লোকসান দিতে হবে। চোরাই পথে গরু আমদানি বন্ধ করা গেলে এমন শঙ্কায় পড়তে হতো না। 

বেড়িবাঁধ এলাকায় বেশকিছু খামার ঘুরে দেখা যায়, খামারগুলোয় ক্রেতাদের আনাগোনা তেমন নেই। যদিও অন্য বছর এ সময় খামারে প্রচুর ক্রেতা থাকত। একই অবস্থার কথা জানা গেছে ঢাকার সাভার, কেরানীগঞ্জ ও ধামরাই এলাকার খামারগুলো থেকেও।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে, এ বছর দেশে পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ, যা গত বছরের থেকে প্রায় ৮ লাখ বেশি। গত বছর গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads