• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই চাষি বেড়েছে ১৩৫০ গুণ!

বিটি বেগুন

সংরক্ষিত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

বিটি বেগুনের পাঁচ বছর

মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই চাষি বেড়েছে ১৩৫০ গুণ!

  • তপু রায়হান
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০১৮

তীব্র বিরোধিতা আর সমালোচনার মধ্যেই ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ২০ কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া হয় জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত বিটি বেগুনের চারা। সে সময় সরকারের তরফে দাবি করা হয়, প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বেগুন পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত জেনেটিক্যালি মোডিফাইড অরগানিজম (জিএমও) বিটি বেগুন চাষ করলে সেই ক্ষতি কমবে। ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা বিটি বেগুনের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, ফলে কীটনাশক প্রয়োগেরও দরকার পড়বে না। তবে সে সময় পরিবেশবাদী সংগঠনসহ অনেকে বিটি বেগুন চাষকে প্রাণ ও প্রতিবেশের জন্য হুমকি উল্লেখ করে তার চাষ বন্ধের দাবি জানায়।

পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, বিটি বেগুন চাষের ক্ষেত্রে দেশি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জানায়, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বিটি বেগুন চাষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও কৃষি মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক চাপে এর অনুমতি দিয়েছে। এসব সমালোচনার মাঝেই গত কয়েক বছরে বিটি বেগুন চাষি বেড়েছে হাজার গুণের বেশি। 

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার চলতি আগস্ট মাসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানিয়েছে, ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ২০ জন কৃষক চার জাতের বিটি বেগুনের চাষ শুরু করেন, সেখানে ২০১৮ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১২ জনে, যা দেশের মোট দেড় লাখ বেগুন চাষির ১৮ শতাংশ। তবে বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিটি বেগুন চাষি বাড়ার এই তথ্যকে এক ধরনের প্রপাগান্ডা হিসেবে দেখছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশসহ ভারত ও ফিলিপাইনে ক্ষতিকর এই বেগুন চাষ উৎসাহিত করতে মনসান্তো এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করিয়েছে।

ফ্রন্টিয়ার বলছে, গত দুই বছরে বিটি বেগুন চাষ বাংলাদেশি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ২০১৪ সালে ২০ জন কৃষকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিটি বেগুন চাষ শুরু হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এই জাতের বেগুন চাষির সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ১০৮ ও ২৫০ জনে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যার ব্যাপক উন্নতি ঘটে। ওই বছর সারা দেশে বিটি বেগুন চাষির সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫১২ জনে। আর এর পরে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে বিটি বেগুন চাষির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১২ জনে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি শেল্টন, ফিড দ্যা ফিউচার সাউথ এশিয়া এগপ্লান্ট ইমপ্রুভমেন্ট পার্টনারশিপের বাংলাদেশ সমন্বয়ক এমজে হোসাইন ও বারির মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন গবেষকের লেখা এই নিবন্ধে বাংলাদেশে বিটি বেগুন চাষের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, ২০১৭ সালে ৫০৫ জন চাষি হেক্টরপ্রতি গড়ে দুই হাজার ১৫১ ডলারের বিটি বেগুন উৎপাদন করেছেন। বিপরীতে ৩৫০ জন চাষি যারা সাধারণ বেগুন চাষ করেছেন, তাদের হেক্টরপ্রতি গড় আয় হয়েছে মাত্র ৩৫৭ ডলার। ওই সময় বিটি বেগুন চাষিরা সাধারণ চাষিদের তুলনায় কীটনাশকের ব্যবহার কম করেছেন ৬১ শতাংশ।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের তথ্যমতে, দেশের দেড় লাখ বেগুন চাষি প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করে থাকেন। বিটি বেগুন চাষ বাড়ায় এসব জমি থেকে এ বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন বেগুন উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, বাহ্যিকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করতে না হলেও এই বেগুনে যে মানবস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না, তার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। কারণ বিটি বেগুনের গাছকেই বিষাক্ত করে দেওয়া হচ্ছে বেসিলাস থুরেনজেনসিস নামের ব্যাক্টেরিয়ার ঈৎু১অঈ জিন ঢুকিয়ে; যা গাছের ভেতর থেকেই বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনকারী এক ধরনের কীটনাশক প্রোটিন উৎপন্ন করে। এই কীটনাশক প্রোটিন মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদে ‘নীরব বিষ’ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বেসিলাস থুরেনজেনসিস ব্যাক্টেরিয়াটি সরাসরি মানুষের অন্ত্রেও নানা রোগ সৃষ্টি করে।

বেলার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ফ্রন্টিয়ার যে তথ্য প্রচার করছে তা আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কারণ প্রথম বছর যে ২০ জন কৃষককে বিটি বেগুনের চারা দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ১৬ জন কৃষকই লোকসানে পড়েন। আমরাও মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর রাখছি। এমন তথ্য তো আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, সত্যিই যদি বিটি বেগুন চাষির সংখ্যা এভাবে বাড়ে তবে উৎপাদনও বাড়ছে। সেক্ষেত্রে এসব বেগুন বিক্রি হচ্ছে কোথায়? সেটা কি লেভেলসহ বিক্রি হচ্ছে? তা না হলে তো মনসান্তোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ এসেছে। তিনি মনে করেন, বিশ্বব্যাপী বিটি বেগুনের প্রধান উদ্যোক্তা মার্কিন কোম্পানি মনসান্তো অন্যান্য দেশে এই বেগুন চাষের অনুমোদন পেতেই এসব প্রতিবেদন তৈরি করাচ্ছে। প্রচার করছে। এটা এক ধরনের প্রপাগান্ডা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads