• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প মেডিসিনাল উদ্ভিদ উদ্ভাবন

সম্প্রতি ঘাসজাতীয় মেডিসিনাল উদ্ভিদ খাওয়ানোর মাধ্যমে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি)

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

বাকৃবি’র নতুন সাফল্য

অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প মেডিসিনাল উদ্ভিদ উদ্ভাবন

  • আশিকুর রহমান
  • প্রকাশিত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সম্প্রতি ঘাসজাতীয় মেডিসিনাল উদ্ভিদ খাওয়ানোর মাধ্যমে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন। উদ্ভাবিত প্লানটেইন বহুবর্ষজীবী ঘাস খাওয়ালে কোনো বিরূপ প্রভাব ছাড়াই প্রাণীর দেহ মোটাতাজা হবে। ঘাসটি খাওয়ানোর মাধ্যমে প্রাণীর মাংস বৃদ্ধির পাশাপাশি মাংস কম চর্বিযুক্ত হয় যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তার এ গবেষণাটি অ্যানিমাল জার্নালসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা জানি, শরীর গঠন, বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণে আমিষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে আমিষ অন্যতম, যা আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে পেয়ে থাকি। তবে প্রাণিজ আমিষ উদ্ভিজ্জ আমিষের চেয়ে উৎকৃষ্ট। মাংস, দুধ এবং ডিম প্রাণিজ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের লক্ষ্যে আশির দশকে শুরু হয়েছিল গ্রোথ প্রোমোটার অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। কিন্তু গ্রোথ প্রোমোটারের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে এখন মানুষ অনেক সচেতন। কারণ কৃত্রিম অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার ব্যবহারের ফলে প্রাণিদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

অপরদিকে প্রাণী থেকে উৎপাদিত পণ্য মাংস, দুধ ও ডিম ভক্ষণের ফলে মানুষের মধ্যেও ক্ষতিকারক রেসিডিউয়াল প্রভাবে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটারের বিকল্প হিসেবে এই উদ্ভাবন গবাদিপ্রাণী মোটাতাজাকরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া প্রাণিজ আমিষ ভক্ষণের ফলে মানবদেহেও কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষক ড. আল-মামুন বলেন, সাধারণ ঘাসের তুলনায় প্লানটেইন ঘাসের মধ্যে অধিক পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘ই’ আছে, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এর মধ্যে এমন কিছু বায়ো অ্যাকটিভ উপাদান আছে যা সাধারণ ঘাসে নেই। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবেও রয়েছে ঘাসটির চমৎকার কার্যক্ষমতা, যা ফ্রি র্যাডিকেলের কার্যকারিতা বন্ধ করে প্রাণিদেহের কোষ ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে। রোমন্থক প্রাণী, যেমন- গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদিকে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে খুব সামান্য পরিমাণে (পোল্ট্রিতে ১ শতাংশ, ভেড়া ও ছাগলে ৪ শতাংশ, গরু ও মহিষে ৫ থেকে ১০ শতাংশ) ফ্রেশ প্লানটেইন এবং এর পাউডার মিশিয়ে খাওয়ালে প্রাণীর হিট স্ট্রেস কমিয়ে প্রোটিনের সিনথেসিস বাড়িয়ে দেয়।

ড. আল-মামুন আরো বলেন, ঘাসটি উচ্চ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় মাংসের উৎপাদন, স্বাদ ও রঙ বৃদ্ধি পায় এবং পচনরোধ করে। এটি হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী প্রাণীর দুধের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ-সবল বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে ফ্যাটি অ্যাসিডের (ওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৩) অনুপাত কমাতে সহায়তা করে। এমন প্রাণিজ আমিষ গ্রহণে মানুষের হার্ট ভালো থাকে। বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল বাড়ায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ক্যানসার ও অটিজম প্রতিরোধ করে। চাষাবাদ সম্পর্কে গবেষক বলেন, ঘাসটি শীতপ্রধান অঞ্চলের উদ্ভিদ। ৬ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তবে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে বেশি ঔষধি গুণাগুণ থাকে। নভেম্বরের শুরুতে বীজ ছিটিয়ে দিলে তেমন কোনো যত্ন ছাড়াই এটি যে কোনো ধরনের মাটিতে জন্মায়। বীজ বপনের ৪৫-৫৫ দিন পর প্রথম কাটিং দেওয়া যায়। এর এক মাস পর দ্বিতীয় কাটিং, দ্বিতীয় কাটিংয়ের এক মাস পর তৃতীয় কাটিং দেওয়া যায়।

মেধাবী ও সুস্থ জাতির জন্য প্রাণিখাদ্যে মেডিসিনাল উদ্ভিদ ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। অর্গানিক পদ্ধতিতে প্রাণিজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রাণিজ খাদ্য হিসেবে উদ্ভিদটি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। গ্রোথ প্রোমোটারের বিকল্প কিছু আবিষ্কার ও ব্যবহারে গবেষকদের সার্বিক সহযোগিতা করার দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে। ঘাসটি যদি মাঠপর্যায়ে চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকের কাছে সুলভ মূল্যে দেওয়া যায়, তাহলে প্রাণিজ সম্পদ থেকে নিরাপদ আমিষ পাওয়া সম্ভব হবে বলে গবেষকদের আশাবাদ।

লেখক : শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads