• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শাহজাদপুরে গো-খাদ্যের সংকট : বিপাকে খামারিরা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতি মন খড় (বিচালী) বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ’ টাকা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

শাহজাদপুরে গো-খাদ্যের সংকট : বিপাকে খামারিরা

# প্রতি মন খড় বিক্রি হচ্ছে ৫’শ টাকায় # দুধের দাম কম,

  • আব্দুল কুদ্দুস, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং বর্ষনে মধ্য জুলাই থেকে শুরু হওয়া পরপর ২য় দফা বন্যায় জনভোগান্তির সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অন্যতম গরু পালনকারী এলাকা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় পাচ সহশ্রাধিক গো-খামারী। অগ্নিমুল্যে গোখাদ্য কিনতে গিয়ে চরম বিপাকে ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারী ও কৃষকেরা। প্রতি মন খড় (বিচালী) বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ’ টাকায়। কাঙ্খিত দুধের দাম না পাওয়ায় অনেক খামারী গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

উপজেলার অর্ধ শতাধিক গরুর বাথান ও ৩ হাজার গোচারণ ভূমি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের অভাব ও এলাকার প্রায় ৪ লাখ গবাদি পশুর খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারন করেছে । গোচারণ ভুমিতে বন্যার পানি ওঠায় ঘাসের জমি ও খড়ের পালা ডুবে যাওয়ায় এ গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যায় উপজেলার চরাঞ্চলসহ সহ বেশ কিছু গ্রামের বাড়ীঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পরে। বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার সময় বেশীর ভাগ এলাকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে ফসলসহ তৃণজাতীয় খাদ্য স্বমুলে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদী পশুর চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্বল্প আয়ের খামারীরা সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরেও গো-খাদ্যের কাচা ঘাসের যোগান দিতে পারছে না। অনেকেই সংসার খরচের পাশাপাশি ধানের খড় (বিচালী) কিনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। ফলে ডোবা নালা খাল বিল থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে গবাদী পশুকে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে। চরাঞ্চলের অনেক খামারী গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়াকে অর্ধাহারে অনাহারে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে অনেক খামারী তাদের গৃহপালিত পশু বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এলাকার ৮ জন খামারী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গত কোরবানীর আগে গো খাদ্যের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করে। ৩০০ টাকা মনের খড় (বিচালী) এখন ৫০০ টাকায়, ৯২০ দরের এক বস্তা ভুসি ১ হাজার ১২০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকা বস্তার খৈল সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সেই অনুপাতে দুধের দাম পাচ্ছেনা খামারীরা। উপজেলায় দুগ্ধ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, মিল্কভিটা, আড়ং দুধ (ব্র্যাক), প্রাণ ডেইরি, এ্যামো মিল্ক, ফার্মফ্রেস সহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান দুগ্ধ সংগ্রহ ও প্রত্রিয়াজাত করে সারা দেশে বাজার জাত করে থাকে। এসকল প্রতিষ্ঠানে দুধ বিক্রির লক্ষেই খামারীরা গাভী পালন করে থাকেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান গুলো দির্ঘদিন যাবৎ দুধের দাম প্রতি লিটার ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দেওয়ায় খামারীদের গরু পালন করতে গিয়ে মোটা টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস ছামাদ জানান, শাহজাদপুরে সরকারীভাবে বড় ধরনের কোন খামার বা গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প না থাকলেও গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষগুলো বাড়তি লাভের আশায় গরু মোটাতাজা করেন। শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ গবাদী পশু এবং ৩ হাজার ৬০৫ টি ডেইরী ফার্ম রয়েছে । এছাড়া এ অঞ্চলে অনেক মৌসুমি খামারও রয়েছে। এ সব খামারে গরু মোটাতাজা করা হয়ে থাকে। এসব মৌসুমি খামারে ও কৃষকের বাড়ীতে ২/৪ টি করে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দুধের দাম কম পাওয়ায় গরু পালন করতে গিয়ে খামারী ও কৃষকদের লোকসান হচ্ছে।
পোতাজিয়া গ্রামের বড় খামারী মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী জানান, তাদের গ্রামে সব মিলে প্রায় ২’শ খামারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরু লালন পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি প্রতিবেদককে জানান তার নিজেরও শতাধিক গরুর একটি খামার রয়েছে । খৈল-ভুষি ও খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দুধের দাম কম থাকায় খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে চারণ ভুমির ঘাস সম্পুর্ন ভাবে বিনষ্ট হওয়ায় চরাঞ্চলে গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত স্বল্প আয়ের লোকজন যেকোন ভাবেই হোক তাদের নিজেদের খাদ্যাভাব মেটাতে পারলেও গবাদী পশুর খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতি মন খড় ৫’শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারা গবাদী পশুর খাবারের ব্যবস্থা করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সকল সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খাঁন জানান, শাহজাদপুর একটি গবাদীপশু সমৃদ্ধ এলাকা। এই গবাদী পশুর খামারের ওপর প্রায় ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads