• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ফসলের হাসিতে হাসছে কৃষক

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

ফসলের হাসিতে হাসছে কৃষক

  • প্রকাশিত ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এবার ফলন ভালো হওয়ায় মনে আনন্দ থাকলেও ধানের দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কারণ এ বছর প্রতি কেজি আমন চালের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩৪ টাকা। এই হিসাব ধরে ২ টাকা মুনাফা ধরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৬ লাখ টন আমন চাল সংগ্রহ করার টার্গেট নির্ধারণ করেছে সরকার। অপরদিকে এই মূল্য নির্ধারণকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন কৃষকরা। তাই বাম্পার উৎপাদন সত্ত্বেও উল্লসিত হওয়ার বদলে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে কি না, সে আশঙ্কায় ভুগছেন কৃষকরা। কারণ চলতি বছর বাজারে গত বছরের চেয়ে ধানের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম। ফলে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, সে সংশয় দেখা দিয়েছে।  জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সারা দেশে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টন আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ করা জমির পরিমাণ গত মৌসুমের চেয়ে ১৪ হাজার হেক্টর  বেড়েছে। গত মৌসুমে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টন ধান উৎপাদন হয়। এবার আমনের আবাদ ভালো হওয়ায় উৎপাদন গত মৌসুমের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার আমন ফসল কাটার খবর জানিয়েছেন বাংলাদেশের খবরের প্রতিনিধিরা—

কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার বিভিন্ন মাঠে এখন আমন ধানের সোনালি শীষ দোল খাচ্ছে। পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা সোনালি ধানের শীষে ভরে গেছে মাঠ। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, চলতি বছরে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় ৮৪ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর, তালায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর, দেবহাটায় ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৬ হাজার ৯২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৯ হাজার ১৩০ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে। তবে জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ধান আবাদ হয়েছে।  এ বছর বৃষ্টি একটু কম হলেও ক্ষেতে পোকামাকড় এবং রোগবালাই নেই বললেই চলে। যে কারণে কৃষি বিভাগ আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছে। মাঠ ভরা সোনালি ফসল দেখে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। তাদের স্বপ্ন এখন আমন ধানের সোনালি শীষে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবদুল মান্নান বলেন, আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। তাই আশা করি, বিগত মৌসুমের মতো এবারো আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কিছু জমির ধানকাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি আর কয়েকদিনের মধ্যে কৃষক কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

আসাদুজ্জামান আসাদ, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহ জেলার খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজ ধানের সোনালি শীষের সমারোহ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় ১৯ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষিরা এখন বিভোর। গৃহস্থ আর কৃষাণ-কৃষাণিরা গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : নবান্নের আমেজে কৃষকরা হয়ে উঠছেন উৎফুল্ল। যেদিকে চোখ যায় শুধু সোনালি ফসল। নবান্নের শুরুতে কৃষি অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কৃষকরা সোনালি ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। কৃষকরা মনের আনন্দে সোনালি ধান আমন কাটা শুরু করেছেন। কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক পরিমল দেবনাথ বলেন, কার্তিক মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ধান কাটা শুরু করি। গত বছরের চেয়ে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলার শমসেরনগর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে ধান কাটার চিত্র চোখে পড়ে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর। এর মধ্যে উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নে ২০২৫ হেক্টর, পতনউষারে ২৩৩৫ হেক্টর, মুন্সীবাজারে ১৩৫০ হেক্টর, শমসেরনগরে ১৩৫০ হেক্টর, কমলগঞ্জ সদরে ১৪১০ হেক্টর, আলীনগরে ২০৫০ হেক্টর, আদমপুরে ২২৪০, মাধবপুরে ১৬৫০, ইসলামপুর ইউনিয়নে ২১৪০ ও কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। আশানুরূপ ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, এ উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠে কিছু ধান দেরিতে পাকবে। সে ধান কাটতে দেরি হবে। তবে কৃষি বিভাগের সার্বিক নজরদারিতে এ বছর ফসল ভালো হয়েছে এবং বাম্পার ফলনও হবে।

মো. শাহাদৎ হোসেন শাহ, দিনাজপুর : বৃহত্তর দিনাজপুরের তিন জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ৬২৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। হাইব্রিড জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও উফশী ও স্থানীয় জাতের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। তবে কৃষকরা দাম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দিনাজপুরের আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক ড. মাহবুবুর রহমান জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুমে বৃহত্তর দিনাজপুরের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ২৩টি উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৯২ হাজার ১২১ হেক্টরে। আর আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৭৫০ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ৩২৯ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও উফশী ও স্থানীয় জাতের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চাইতে কম হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ৩১ হাজার ৯৬৭ হেক্টরের স্থলে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৭৯ হেক্টরে, যা ২ হাজার ৭১২ হেক্টর বেশি। উফশী জাতের ৪ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৯ হেক্টরের স্থলে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩০ হেক্টরে, যা লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ১ হাজার ৮২৯ হেক্টর কম। ৫ হাজার ১৯৫ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রার স্থলে স্থানীয় জাতের রোপা আমন আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬৪১ হেক্টরে, যা লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ৫৫৪ হেক্টর কম। কৃষি কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান আরো জানান, চলতি মৌসুমে বৃহত্তর দিনাজপুরের তিনটি জেলার ২৩টি উপজেলায় বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চাইতে প্রায় ৬৩ হাজার মেট্রিক টন ধান অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ও আনন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কৃষকদের আশঙ্কা ন্যায্যমূল্য না পেলে তাদের আর্থিকভাবে কম লাভের সম্মুখীন হতে হবে। এরই মধ্যে মাঠ থেকে প্রায় ২০ ভাগ ধান কৃষক কেটে নিয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাকি সব ধান কাটা শেষ হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads