• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

কৃষি অর্থনীতি

বোরো বীজতলা

ঝিনাইগাতীতে আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

  • সুজন সেন, শেরপুর
  • প্রকাশিত ০৯ জানুয়ারি ২০১৯

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় ঝুলে আছে সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগের দুই শতাধিক আবেদন। প্রায় দুই মাস আগে করা ওইসব আবেদনের বিপরীতে সারা না পেয়ে সেচ পাম্প মালিকসহ শত শত কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে আবেদনপত্র হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। এ সম্পর্কে বিএডিসির ঝিনাইগাতীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, নির্বাচনের কারণে কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তবে আবেদনগুলো সরেজমিন প্রতিবেদনসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ছাড়পত্র দেওয়া হবে। অন্যদিকে সেচ কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, আবেদনগুলো এখনো তার হাতে পৌঁছেনি। হাতে পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাচনমহুরী গ্রামের আবেদনকারী সেচ পাম্প মালিক কাবুল হোসেন বলেন, গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ  পেতে প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও পরে উপজেলা সেচ কমিটির কাছে অনুমতির প্রয়োজন হয়। আর সেই অনুমতি পেতে  প্রায় দুই মাস আগে এ উপজেলা থেকে দুইশ গভীর নলকূপ (সেচ পাম্প) মালিক বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেন বিএডিসিতে। কিন্তু বোরো মৌসুমের উপযুক্ত সময় অতিবাহিত হতে চললেও এখনো আবেদনকারীরা বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতি পাননি। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে সেচ পাম্প চালু ও কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে পারছেন না বেশ কিছু এলাকায়।

দড়িকালিনগর গ্রামের মতিউর রহমান, ফরিদ হোসেন, কোনাগাঁও গ্রামের আবদুর রহমান, পানবর গ্রামের আনোয়ার হোসেন,  মোজাফফর, কাংশা গ্রামের ইদ্রিস আলীসহ বেশ কয়েকজন সেচ পাম্প মালিক বলেন, সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ইতোপূর্বে তারা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান সেচ কমিটির সভাপতির পদ থেকে বাদ যাওয়ায় তাদের বর্তমান সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে নতুন করে অনুমতি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সে হিসাবে দুই মাস আগে তারা বিএডিসিতে আবেদন করেছেন। বিএডিসি সরেজমিনে তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিলের পর তা অনুমোদন দেওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের সেই অনুমোদন মেলেনি। ফলে আবেদনকারী শত শত গভীর নলকূপ মালিকসহ কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

 

নষ্ট হচ্ছে বীজতলা

শহিদ জয়, যশোর

যশোরের মনিরামপুরের জলকর রোহিতা গ্রামের চাষি আবুল খায়ের। প্রতিবছর চার থেকে সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন তিনি। এবারো সমপরিমাণ জমিতে বোরো চাষের ইচ্ছে তার। সেই লক্ষ্যে ২০-২৫ দিন আগে তিন কাঠা জমিতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন তিনি। কিন্তু গজানোর পর চারাগুলো লালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও তিনি বীজতলা টেকাতে পারছেন না। খবর নিয়ে জানা গেছে, জলকর রোহিতার মতো উপজেলার খেদাপাড়া, গালদা, চাঁদপুর, দীঘিরপাড়, হানুয়ার, হরিদাসকাঠি, মহাদেবপুর, খানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে কৃষকরা বোরো ধানের বীজতলা রক্ষা করতে পারছেন না।

জলকর রোহিতা গ্রামের চাষি জয়নাল বলেন, ‘আমরা তিনজনে মিলে দশ কাঠা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি। পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।’ বোরো মৌসুমের শুরুতে চাষিরা হোঁচট খেলেও এ বিষয়ে কোনো খোঁজই রাখেন না সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা- এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের।

তবে ঠান্ডাজনিত কারণে এবার বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি উপজেলা কৃষি অফিসের। এমন পরিস্থিতিতে আশামিল বা রিডোমিল গোল্ড কিংবা থিয়োভিট নামে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ কৃষি অফিসের। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা বিকেলে বীজতলায় গরম পানি ঢুকিয়ে সকালে বের করে দিলে প্রতিকার পাবেন বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরককুমার সরকার বলেন, ‘তীব্র শীতের কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। যারা অফিসে আসছেন, তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।’

কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোনো উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের কাছে যাচ্ছেন না বা তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন না, এমন অভিযোগ কৃষকরা করলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এবার বোরো মৌসুমে মনিরামপুরে ২৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।

 

বীজতলায় পলিথিন ব্যবহার!

মোফাজ্জল হোসেন বিপুল, বোদা (পঞ্চগড়)

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বৈরী আবহাওয়া ও তীব্র কুয়াশার কারণে এ অঞ্চলের বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। জানুয়ারির শুরু থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে, সঙ্গে কুয়াশা পিছু ছাড়ছে না। সকালে কুয়াশার স্থায়িত্ব বেশি হওয়ার ফলে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। ঘন কুয়াশার কারণে যাতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ বীজতলা রক্ষায় কৃষককে করণীয় সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে পঞ্চগড়ে প্রায় ৪৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

বোদা উপজেলার নগরকুমারী গ্রামের কৃষক পচকটু জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি ৬০ কেজি বীজের বীজতলা করেছেন। এখন ওই চারা জমিতে রোপণের সময় হয়ে আসছে। কয়েকদিন আগে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহে কিছু চারা নষ্ট হয়েছে। এখনো কুয়াশা থাকায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যায় পলিথিন দিয়ে বীজতল ঢেকে রাখছেন।

বোদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমি তৈরিসহ বোরো ধানের বীজতলা তৈরীর ধুম পড়েছে। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণে শঙ্কা কাটছে না কৃষকের। তাই বীজতলা রক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে চাষিরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাকনাশক স্পে করে ও পলিথিনে ঢেকে চারা রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে বিগত বছরগুলোতে ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চলতি বছর সচেতন কৃষকরা কুয়াশার হাত থেকে রক্ষায় বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুনুর রশিদ জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলে কৃষির জন্য বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই আগে থেকে বিশেষ করে কৃষকদের বীজতলা রক্ষায় বিভিন্ন প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বীজ তলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা আক্রান্ত বীজতলা পানি দিয়ে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা এবং প্রয়োজনে চারার মধ্যে জমানো শিশির শক্ত কিছু দিয়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads