• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বরগুনার আবাদী জমি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

ভ‍ূমি আইন মানছেনা কেউ

দক্ষিণাঞ্চলের আবাদি জমি কমছে আশংকাজনকভাবে

  • বরগুনা (সদর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০১৯

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা জেলার কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদরাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অব্যাহত নদী ভাঙ্গন, ইট-ভাটা, হাট-বাজার, মৎস্য খামার, ও শিল্প-কারখানা নির্মাণে যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে কমছে কৃষি জমি। গড়ে প্রতিদিনে পঞ্চাশ বিঘা জমি কৃষি থেকে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। একইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন ১.৫ বিঘা জলাভূমি। সেসব জলাভূমিও ভরাট করে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আবাদি জমি হ্রাস পাওয়ায় দ্রুত কমে যাচ্ছে কৃষি উৎপাদনশীলতা। যুগযুগ ধরে কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত কৃষকের প্রায় অর্ধভাগ জীবনজীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করে মোড়ঘুরতে না পেরে দারিদ্রের কষাঘাতের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। নগদ টাকার লোভে জমি বিক্রি করে উদ্বাস্তু হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

সারাদেশের ন্যায় বরগুনার গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। আর নতুন নতুন আবাসন স্থাপনের ফলে তার প্রভাব পড়ছে ফসলি জমির ওপর। কৃষি জমিতে প্রথম ধকলটিই পড়ে পরিবার বিভক্ত হলে। বাবার একখন্ড আবাদি জমি চার সন্তান পৃথক হওয়ার সাথে সাথেই চারখন্ডে পরিনত হয়। আবাদি জমিতেই গড়ে তোলে চারটি ঘর। অনেকে এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব অথবা চাকরির কারণে স্থানান্তরিত হওয়ায় কৃষি জমির গুরুত্ব হারিয়ে অনেকটা পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্বল্পমূল্যে বা বিনেমূল্যে আবাদি জমি শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ার নামে গ্রাস করছে স্বনামে-বেনামে বেশকিছু দেশী-বিদেশী কোম্পানী বা গ্রুপ।

গ্রামীণ কৃষি জমির সবচেয়ে বেশী গ্রাস করে নিচ্ছে অপিরকল্পিতভাবে বেড়ে উঠা ইটভাটাগুলো। ১৫ থেকে ২০ একর আবাদী জমি ধ্বংস করে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠে। ইটভাটার জন্য ব্যবহৃত মাটিও কেটে নেওয়া হয় আবাদি জমি থেকে। বরগুনায় দুই শতাধিক ছোটবড় ইটভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশই পরিবেশ অধিদপ্তরের নিবন্ধনহীন। অধিকাংশ ইটভাটার মালিকপক্ষ মানছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধানাবলী। আবাদী জমি থেকে মাটি কেটে সর্বনিম্ন ২ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। ইটভাটার মালিকগনের অনেকেই ঐ গর্তে মাছ চাষ করে। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প। শুধু ব্যক্তি উদ্যোগের কারণে নয় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কারণেও কমছে দক্ষিণাঞ্চলের আবাদী জমি। বরগুনার তালতলীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ ভাঙা শিল্প কারখানা, যমুনা গ্রপের শিল্পায়ন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক নির্মান, আশ্রায়ন প্রকল্প প্রভৃতি নির্মানে ব্যবহৃত হয়েছে শতশত একর আবাদী জমি। ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি-২০১০’ এবং ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০’ অনুযায়ী কৃষি জমি কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। দক্ষিাণাঞ্চলে অদ্যোবধি এআইন কোথাও কার্যকর হয়েছে বলে কারো জানা নেই। এখানকার অঘোষিত নিয়মনীতি হচ্ছে ‘কৃষি জমি যে কেউ যে কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এটা নিয়ন্ত্রণের কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই।’ উর্বর ও কৃষি জমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা কোনোভাবেই নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে একটি আইন থাকলেও এর শাস্তির কার্যকারিতা নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads