• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বছরে নষ্ট ১১ হাজার কোটি টাকার ধান

ছবি : সংগৃহীত

কৃষি অর্থনীতি

বছরে নষ্ট ১১ হাজার কোটি টাকার ধান

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৯

আউশ, আমন আর বোরো মিলে তিন মৌসুমে দেশে ধানের উৎপাদন গত বছর দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৯৬ হাজার টনে। জমি চাষ ও সেচে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও ধান মাড়াইয়ে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে প্রতি বছর মাড়াইয়ের সময় ও মাড়াই পরবর্তী সংরক্ষণ, বাজারজাতে অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ধান। ২০১৮ সালে তিন মৌসুমে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৩৮৮ টন ধান নষ্ট হয়েছে। খাদ্যের মজুদ বাড়াতে সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে। এ হিসাবে গত বছর নষ্ট হওয়া ধানের মূল্য ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর বাজার মূল্যে নষ্ট হওয়া ধানের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।

কৃষি ও পল্লী অর্থনীতি নিয়ে প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আউশ মৌসুমে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৩ টন ধান নষ্ট হয়েছে। আমন মৌসুমে নষ্ট হয়েছে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৩৯৯ টন ধান। আর বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৬ টন ধান নষ্ট হয়েছে। তিন মৌসুমে মোট উৎপাদনের সাড়ে ৭ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে বলে হিসাবে উঠে এসেছে। শতকরা হিসাবে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে আউশ মৌসুমে। মাড়াইকালীন ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ আউশ, ৩ দশমিক ১০ শতাংশ আমন ও ২ দশমিক ৯২ শতাংশ বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। আর মাড়াই-পরবর্তী সময়ে নষ্ট হয়েছে ৫ দশমিক ৫২ শথাংশ আউশ, ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ আমন ও ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বোরো ধান।

ধান ছাড়াও আরো আটটি ফসলের উৎপাদনের তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে গত বছর মাড়াই ও এর পরবর্তী সময়ে মোট ৫১ হাজার ২৯৯ টন গম নষ্ট হয়েছে। ভুট্টা নষ্ট হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৩ টন। একই সময়ে ৪ লাখ ৭১ হাজার ২৪০ টন পাট ও ৬ লাখ ১৮ হাজার টন আলু নষ্ট হয়েছে। মসুর ডাল নষ্ট হয়েছে ১৪ হাজার ৫৭ টন। এর বাইরে ২৪ হাজার ২৩৩ টন সরিষা, ৭ হাজার ৫৮৩ টন হলুদ ও ৩০ হাজার ৫২৪ টন মরিচ নষ্ট হয়েছে। এ সব পণ্যের দাম হিসাব করলে গত বছর ফসলহানি হয়েছে ১১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার।

সার্বিক বিচারে বাংলাদেশে ধানের অপচয়ের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব বেশি হচ্ছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ এম হামিদুর রহমান। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যে জর্জরিত বাংলাদেশে এক সময়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অপচয় কমিয়ে আনা, গুণগত মান নিশ্চিত করার মতো বিষয়ে ততটা নজর দেওয়া হয়নি। তবে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে আসায় অন্যান্য বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কৃষকদের নিয়ে প্রচারণামূলক বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে উৎপাদন-পরবর্তী ফসলের ক্ষতি শূন্যে নামিয়ে আনা গেলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. তাওফিকুল ইসলাম খান বলেন, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ধানের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। তবে ধান চাষে পাওয়ারট্রিলার ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো প্রযুক্তির প্রচলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের সব প্রণোদনাও পাওয়ারট্রিলার ঘিরে। ফসল সংরক্ষণে অবকাঠামোর পাশাপাশি কৃষকদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। ফসলের অপচয় কমানোর পাশাপাশি ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে এসব বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে সংরক্ষণ অবকাঠামো সৃষ্টি করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বরাবরই এগিয়ে আছে কৃষি খাত। এ খাতে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ মানুষ কাজ করেন। কর্মে নিয়োজিত ৪ কোটি ৭০ লাখ ১৯ হাজার মানুষের প্রায় ৫২ শতাংশের কর্মসংস্থান আসছে কৃষি থেকে। সেবা ও শিল্প খাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে বাকি অর্ধেকের কম মানুষের।

কৃষি খাতের নিয়োজিতদের মধ্যে ৮১ লাখ ৭৭ হাজার জন আত্মকর্মসংস্থানে নিয়াজিত আছেন বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। পারিবারিক সহযোগী হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার জন। কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ৭২ লাখ ৯২ হাজার জন। অন্যান্যভাবে কৃষিতে আছেন ১ লাখ ৬৮ হাজার জন। এ খাতে শ্রমিকরা দৈনিক গড়ে ৩৮৬ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে আসছেন। পুরুষদের গড় মজুরি ৩৮৮ টাকা। আর নারীরা পেয়ে থাকেন ৩৪৬ টাকা করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads