ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যে ছোট এক উপজেলা আখাউড়া । একটি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। পৌর এলাকার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন অনেক ভবনও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক ভবনের মালিক ও ভাড়াটিয়ারা মিলেমিশে ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। ছাদ কৃষিতে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে তারা ছাদে আম,পেয়ারা, লেবু মাল্টা, বেগুন,মরিচ,পেপেসহ নানা জাতের ফল ,ফুল আর সবজি আবাদ করছেন। দিন দিন বাড়ছে এ আবাদ। ভবনের ছাদে দৃষ্টি পড়লেই দেখা মিলে বিভিন্ন ফল, শাকসবজি ও ভেষজসহ নানা জাতের গাছগাছালির বাগান । বছর জুড়ে ছাদে এসব আবাদ করে তারা নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছেন ।
কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন বাড়ির ছাদে এ বাগান শুধু শখের বিষয় নয়, পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করছে। ছাদ কৃষিতে বাগানের মাধ্যমে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পরিবেশ দুষণমুক্ত থাকে। বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া তাজা শাকসবজি ও ফল মুলের চাহিদা ও মেটে। এসব কারনে বাড়ির ছাদে বাগান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বাড়ির ছাদে বাগান করা হলে এটি প্রতিটি পরিবারের সবজি ও ফলমূলের চাহিদা মিটিয়ে ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে জানায়।
সরেজমিনে পৌর শহরের রাধানগর, দেবগ্রাম. তারাগন, মসজিদপাড়া , মালদারপাড়া, খড়মপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে বাগান ঘুরে দেখা যায়, দেশি, চায়না দার্জিলিংয়ের কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, জামরুল আম, জলপাই, ডালিম, আনার, তেজপাতা, বাউকুল, আপেল কুল লেবু, আমড়া পুঁই শাক, লাউ, ঢেরস, টমেটো, বেগুন,বরবটি,করলা গোলাপ, গেন্দা, ক্যাকটাসসহ বিভিন্ন রকমের বৃক্ষ ছাদে ছাদে শোভা পাচ্ছে। এসব নিয়ে মালিক ও ভাড়াটিয়ারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সবজি আর ফলমুলে তাদের বাড়ির ছাদ যেন ঢাকা পড়ে সবুজ শ্যামলে পরিণত হয়ে আছে। নিচ থেকে বুঝা যায় এটি যেন জমির মধ্যে সবজি আবাদ করা হয়েছে। বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন খালি ড্রাম ও প্লাষ্টিকের বড় কৌটা সিমেন্টের স্থায়ী টব তৈরী করে ছাদ কৃষি করছেন।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেন বলেন পরিবারের লোকদের সহযোগিতায় তিনি বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। নির্মিত ভবনের পুরো ছাদ জুড়ে আবাদ করেছেন আম,পেয়ারা, লেবু মাল্টা, ,বেগুন, মরিচ, পেপেসহ নানা জাতের ফল ও ফুল বাগান। শুরুতে সংশয়ে পড়লে ও তবে ফলন হওয়ায় সংশয় কেটে যায়। তিনি জানায় ছাদ কৃষিতে সবজি বার মাসই আবাদ করা হয়। তাছাড়া শাকসবজি ও ফল মুল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিতেও ভালো আয় হয় বলে জানায়।
শিক্ষিকা মৌসুমী আক্তার বলেন, কর্মব্যস্ত থাকার পরও সময় বের করে তিনি ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। সেখানে রয়েছে আম,মাল্টা, পেপে গোলাপসহ বিভিন্ন জাতের ফল ফুল। তিনি আরও বলেন শখের কারণে এটি করলেও এতে আমার পরিবারের কিছুটা চাহিদাও মিটছে। আমার পুরো বাগানের গাছগুলো বারোমাসি ফল ধরে। বছরের পুরো সময় জুড়ে বাগান থেকে কোন না ফল পাই। যা সচরাচর বাজারেও পাওয়া যায় না।
বাগানগুলো পরিচর্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে বাগান পরিচর্যার ফলে আমার পরিবারের সদস্যদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধিত হয়।
দ্বিপক ঘোষ বলেন, শখের বসে গত চার বছরে তিনি তিলে তিলে ছাদ বাগানটি গড়ে তুলেছি। তার এই ছাদ বাগানে গোলাপ, হাসনাহেনা, বেলী, জবা, শিউলীসহ প্রায় ১০-১২ প্রজাতির ফুল রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে নানা প্রকার ফল ও সবজি । সারাদিন কর্মব্যস্ত শেষে যখন এই বাগানটি দেখি তখন মন জুড়িয়ে যায়। বাগান ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশপাশের লোকজনও দেখতে আসে।
পৌর শহরের তারাগন এলাকার মো. মামুন মিয়া বলেন কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় গত ১ বছর আগে মাল্টা,পেপে, লেবু, মরিচসহ বেশ কয়েকটি ফল ও ফুলে চারা বাড়ির ছাদে ড্রামের লাগিয়েছে বলে জানায়।
মসজিদ পাড়ার মো. খাজু ভূইয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্বেও বাড়িতে জায়গা কম থাকায় ফল ফলাদি ও সবজির আবাদ করা যায়নি। হঠাৎ একদিন ভাবলাম ছাদেই গড়ে তুলব স্বপ্নের বাগান। তারপর ড্রাম ও টবের মাধ্যমে ফল ফলাদি ও সবজির আবাদ করতে ছাদকে বেছে নেওয়া হয়। ছাদ কৃষিতে রয়েছে বরবটি, লেবু বেগুন, মরিচ, পেপেসহ নানা জাতের ফল ও ফুল গাছ। বাগানে উৎপাদিত বিষমুক্ত এসব ফল ও সবজি নিজেদের চাহিদা মিটাচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এ উপজেলায় ছাদ কৃষি নতুন আবাদ শুরু হয়েছে । জমির পাশাপাশি লোকজনকে ছাদে ফল ও সবজি আবাদ শুরু করছেন।
ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত স্বাস্থসম্মত খাদ্য শরীরের জন্য যেমন নিরাপদ একই ভাবে তা অনুকুল পরিবেশ ও আবাসন স্থানকে দুষণমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ছাদ কৃষি মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়ে তুলতে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।