• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

বিশ্লেষণ

গুজব, গণপিটুনি আর বিমান ছিনতাই চেষ্টার বছর

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

নানা আলোচিত-সমালোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো একটি বছর। প্রকাশ্যে দিবালোকে গণপিটুনিতে হত্যাসহ একাধিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল সরব। বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারাতে হয়েছে শতাধিক মানুষকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে কমান্ডো স্টাইলে বিমান ছিনতাইও দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। আলোচিত-সমালোচিত এসব ঘটনা দেশের বিবেকবান প্রত্যেক মানুষের হূদয়কে নাড়িয়ে দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রকে। এসব ঘটনা নিয়েই বাংলাদেশের খবরের ২০১৯ সালের অপরাধবিষয়ক সালতামামি—

গণপিটুনিতে প্রাণ গেল ছয়জনের : ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে মানুষের মাথা লাগে’—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা ডালপালা মেলেছিল সারা দেশে। গুজবের ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘সন্দেহজনক অপরিচিত’ দেখলেই ‘কল্লাকাটা’ ভেবে গণপিটুনির মতো ঘটনা অহরহ ঘটতে শুরু করেছিল। ‘কল্লাকাটা’ ভেবে গণপিটুনির ঘটনা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, অপ্রত্যাশিত এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের সব পর্যায়, মানবধিকার কমিশন, পুলিশপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন অনেকেই গুজবে কান না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষকে। সাধারণ মানুষ যাতে গুজবে কান না দেন, তা নিয়ে গণমাধ্যমও ছিল সোচ্চার।

সরকারের সব পর্যায়সহ পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালকের পক্ষ থেকে এ ধরনের গুজবে কান না দিতে দেশবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবু থেমে থাকেনি গুজবে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা। সন্দেহজনক অপরিচিত ভেবে অন্তত ২৫টি স্থানে সাধারণ মানুষকে গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছিল। এদের ভেতরে নিহত হয়েছিলেন ছয়জন।

গুজবে হত্যার শিকার হওয়া ছয়জনের ভেতরে তসলিমা বেগম রেনু হত্যাকাণ্ড ছিল সবচেয়ে আলোচিত। চলতি বছরের ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজ মেয়ে তাসমিন তুবাকে ভর্তি করতে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে যান মা রেনু। সেখানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণপিটুনির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। একই দিনে গণপিটুনিকে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ উল্লেখ করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ সদর দপ্তর। এতকিছুর পরও ২০ জুলাই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত (৫০) এক ব্যক্তিকে হত্যা করে জনতা। সাভারের হেমায়েতপুরে ছেলেধরা সন্দেহে অজ্ঞাত এক নারীকে গণপিটুনি দেন এলাকাবাসী। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। একই দিন দুপুরে পাবনার চাটমোহরে ছেলেধরা সন্দেহে রাসেল রানা (৩২) নামে এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন এলাকাবাসী। ওই দিন বিকালে রাজশাহীর তানোরে ছেলেধরা সন্দেহে পৃথক স্থানে মনোয়ারুল (৩০) ও লুৎফর (২৯) নামের দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া ওই দিন রাত ৮টার দিকে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে মো. নাসিরউদ্দিন (২৫) নামের এক যুবককে গণপিটুনির পর পুলিশে দিয়েছিলেন স্থানীয় জনতা। শুধু তাই নয়, একই রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ও সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে দুজন গণপিটুনির শিকার হন। এতে এক যুবক নিহত হন।

একই দিনে আটজনকে গণপিটুনির ঘটনার পর ২১ জুলাই সকালে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় কুসম্বা ইউনিয়নের বুড়িদহ এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে ছয় জেলেকে গণপিটুনি দেন স্থানীয়রা। ওই দিন সকালে টাঙ্গাইলে সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের কান্দিলা বাজারে ছেলেধরা সন্দেহে অজ্ঞাত এক যুবককে গণপিটুনি দেন স্থানীয় জনতা।

গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় অপরিচিত হওয়ায় তিন ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গণপিটুনির শিকার হন তিনজন। পরদিন ১৮ জুলাই নেত্রকোনা জেলা শহরের নিউটাউন পদ্মপুকুরপাড় এলাকায় শিশুর গলাকাটা মাথা ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়ায় রবিন নামের এক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া ১১ জুলাই চাঁদপুরে মনু মিয়া নামের একজনকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এর আগে গত ৯ জুলাই ছেলেধরা সন্দেহে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের চাঁদগেটে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয়রা।

চুড়িহাট্টায় আগুনে নিহত ৭১ : চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে নিহত হন ৭১ জন। চকবাজার থানার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের পারফিউমভর্তি কেমিক্যালের গোডাউনের ওই আগুন মুহূর্তে সড়কে থাকা রিকশা যাত্রীসহ পথচারীদের অঙ্গার করে। নিহতের ৪৬ জনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের দুদিন পর ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ মামলা করা হয়।

কমান্ডো স্টাইলে বিমান ছিনতাইচেষ্টা : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ পলাশ নামে এক যাত্রী ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads