• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

বিশ্লেষণ

ক্রিকেটের আন্দোলন ও সাকিবের শাস্তি

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ অনেক ধরনের আন্দোলন দেখে এসেছে। স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন ছাড়াও যে কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সড়ক দুর্ঘটনা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন, ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন- এসব দেখেছে সবাই। ক্রিকেটারদের আন্দোলন আগেও কিছু কিছু হয়েছে। কিন্তু এবারেরটি ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। ক্রিকেটের আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করার ঘটনা ছিল ২০১৯ সালের আলোচিত বিষয়।

গত ২১ অক্টোবর দুপুরে হুট করেই মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশকিছু ক্রিকেটারকে জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু অনুশীলনের পোশাকে নয়, সাধারণ পোশাকে নিজেদের মধ্যে গুরুতর বিষয়ে আলাপ চালাচ্ছিলেন তারা। খানিক পর সাংবাদিকদের আচমকা সংবাদ সম্মেলনে ডেকে নেন জাতীয় ক্রিকেটাররা। দাবি-দাওয়ার দাবিতে তারা আন্দোলনে যেতে পারেন, এমন একটা আভাস মিলছিল। সেই আন্দোলন যে শুরুতেই একদম কঠোর হয়ে যাবে তা অবশ্য আঁচ করা যায়নি।

সাকিব আল হাসান থেকে ফরহাদ রেজা, নাঈম ইসলাম থেকে তামিম ইকবাল- জাতীয় দল, ঘরোয়া ক্রিকেটের সব ক্রিকেটার, সবাই একজোট। সমবেত কণ্ঠে তারা জানালেন এগারোটি দাবি, যা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব রকমের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়ে দেন তারা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দেশের ক্রিকেটে এত বড় খেলোয়াড় ধর্মঘটের নজির নেই।

ভারত সফরের ঠিক আগেই ক্রিকেটারদের এমন ধর্মঘটে হুট করেই গরম হয়ে গেল হাওয়া। ঘরোয়া পর্যায়ে বেতন বৈষম্যের সঙ্গে বিসিবির নানা অনিয়ম নিয়ে শুরু হয় তুমুল হইচই। বিসিবি এমন বড় কিছুর জন্য প্রস্তুতই ছিল না।

তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বোর্ড। গুমোট অবস্থার মাঝে পরদিন জরুরি সভা করে গণমাধ্যমের সামনে আসেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। তার সংবাদ সম্মেলনে ছড়ায় উত্তেজনা। ক্রিকেটারদের এমন ধর্মঘটে যাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র খুঁজে পেয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি। তার সেই সংবাদ সম্মেলনে বেরিয়ে আসে অনেক অপ্রিয় কথা। অনেক ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কথা বলতে ছাড়েননি তিনি।

সমাধান আসেনি ওইদিনও। পরদিন সকাল থেকেই দেখা দেয় ইতিবাচক হাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ক্রিকেটারদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আভাস দেন বোর্ডপ্রধান। কিন্তু ক্রিকেটাররা আবার মোড় ঘুরিয়ে শুরু করেন নতুন নাটক। সন্ধ্যার পরে গুলশানের একটি হোটেলে তারা ডাকেন পাল্টা প্রেস ব্রিফিং।

এক আইনজীবীকে দিয়ে পুরনো দাবিগুলোই নতুন করে তুলে ধরে আরো দুই নতুন দাবি যোগ করেন তারা। চেয়ে বসেন বিসিবির রাজস্বের ভাগও। তবে তাদের এই হম্বিতম্বি টিকেছে খানিকক্ষণ। ওই ব্রিফিং সেরেই বিসিবিতে এসে প্রভাবশালী পরিচালক আর বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সভায় বসেন ক্রিকেটাররা। সেখানেই হয়ে যায় অচলাবস্থার অবসান। পরে যৌথ ব্রিফিংয়ে আসে ধর্মঘট প্রত্যাহার ও দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা। বলা বাহুল্য, ক্রিকেটারদের চাওয়ামতো সব দাবি খাপে খাপে পূরণ হয়নি এখনো।

নিষিদ্ধ সাকিব আল হাসান

এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় তো বটেই, সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বড় ঘটনা এটি। জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথন গোপন করায় এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিবকে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কাঁপিয়ে দেয় সাকিবের নিষেধাজ্ঞা। নাড়িয়ে দেয় গোটা ক্রিকেট বিশ্বকেই।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানায়, ২০১৮ সালে চার মাসের মধ্যে তিনবার জুয়াড়ির সঙ্গে কথা হলেও তা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গোপন রাখেন সাকিব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads