• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আবেদন....

প্রতীকী ছবি

বিশ্লেষণ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আবেদন....

  • মোঃ আলাউদ্দিন
  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০২০

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে প্রধানমন্ত্রী বলে সম্মোধন করার চেয়ে আমি আপা বলতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ আপনাকে যখন প্রথম বার খুব কাছ থেকে ধানমন্ডির সুধা সদনে দেখতে পেয়েছিলাম, তখন আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তখন আপনি ছিলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান ও বিরোধী দলীয় নেত্রী। প্রতিটি দলীয় নেতা কর্মীদের কাছে প্রিয় আপা হিসেবেই বেশী পরিচিত।

আপনার ভাতৃত্ব সুলভ আচরণ খুব কাছ থেকে দেখেছি, যখন ছাত্রলীগের কোন নেতা-কর্মী অধিকার আদায় করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাতো, আপনি সেখানে ছুটে আসতেন আপনার মমতা ভরা হাত খানি মাথায় বুলিয়ে দিতেন।

আপা, সময়ের পরিক্রমায় আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের পথে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। আমরা যখন সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি তখন আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে অদৃশ্য এক প্রতিবন্ধকতা। করোনা ভাইরাস নামক এই প্রতিবন্ধকতা পুরো বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। থমকে দিয়েছে আমাদের অগ্রযাত্রা।

মরণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত বিশ্বে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি ভীতসন্ত্রস্ত। আমরা আসলে কতটুকু প্রস্তুত এই ভাইরাস মোকাবেলায়? যেখানে একদিন কাজ না করলে আমাদের দেশের নিন্ম আয়ের মানুষের দু'বেলা দুমুঠো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা দায়। লকডাউন সেখানে আমাদের কাছে বিলাসিতা মনে হয়। তারপরও জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে বাসায় থাকতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে মমতাময়ী মাতা হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর নির্দেশনা দিয়েছেন আপনি। এ নির্দেশনায় নিম্ন আয়ের মানুষ আশার আলো দেখেছে বলে আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী থাকতে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সেই সকল ত্রাণ বন্টনেও রয়েছে চরম অনিয়ম। সংবাদপত্রে সে সব অনিয়মের খবর আসছে প্রতিদিন।

একটা বিশেষমহলে বাহিরে এই সুবিধা পাচ্ছে না ক্ষুধার্ত সাধারণ জনগণ। আপা,দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে মধ্যবিত্তরা রয়েছে সবচেয়ে আসহায় অবস্থায়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরে থাকতে গিয়েও চরম অনিশ্চয়তা ভাবাচ্ছে তাদের। তাদের না আছে ঘরে বসে থেকে খাওয়ার মত অর্থ, না পারছে কারো কাছে হাতপাততে।

আপা, বিভিন্ন দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের জন্য সামনে খুব খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। অল্প সময়ে হাঁপিয়ে উঠা মানুষগুলো এত লম্বা সময় কিভাবে বাঁচবে!! তাদের ভাবতে হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে তারা কি করবে?

আপা, আপনি কারো ফোন পেয়ে যখন তাকে রিক্সা কিনে দেন, কারো চিঠি পেয়ে যখন চিঠির উত্তরে সেতু বানানোর প্রতিশ্রুতি দেন, স্কুলে যাওয়ার বাসের ব্যবস্থা করে দেন! এসব আমাদেরকে আপনার উপর ভরসা করতে শেখায়। তাই আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দেশের কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না এটা আমাদের বিশ্বাস। শুধু প্রয়োজন খবরটা আপনার কাছে পৌঁছানো।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে আপনি যখন টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন কেন আমাদেরকে এই ক্রান্তিকালীন সময়ে এসে সেই বাপ-দাদাদের আমলের মত ত্রাণ বন্টন করতে হবে আপা? এই পুরাতন ত্রাণ বন্টন ব্যবস্থায় সরকার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রান দেওয়ার পরও তা সত্যি কারের গরীব দুঃখীদের কাছে সব সময় পৌঁছায় না। আর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কিছুটা আত্মসম্মানবোধের কারনে এই ত্রানের জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারে না বা তাদের নামে কোন কার্ড ইস্যু হয় না।

আপা, আমরা কি পারি না ডিজিটাল পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশে ত্রাণ বিতরণ করতে? কাজটা বেশী কঠিন নয়, শুধু দরকার একটু আন্তরিকতার। আমার বিশ্বাস সেই আন্তরিকতা আপনার আছে। আপা, দেশে কতগুলো পরিবার আছে তার হিসাব নিশ্চিত আমাদের ডাটাবেইজে রয়েছে? না থাকলেও সমস্যা নেই। আমাদের একটা সুন্দর ভোটার তালিকা তো আছেই। সেটা দিয়েই কাজটা অতি সহজেই করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। প্রতিটি পরিবার বা প্রতিটি ভোটার আইডির বিপরীতে একটা করে রেশনিং কার্ড ইস্যু করে দিন। তারপর সারাদেশে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে দিন রেশনিং কার্ডের মালামাল বন্টন করার। তারা বাড়ি বাড়ি যাবে মানুষ কার্ড দেখিয়ে এই আপদকালীন সময়ে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত মালামাল বুঝে নিবে। জানি প্রথমে কিছুটা কষ্ট করতে হবে। কিন্তু একবার করে ফেললে আর কখনও পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এতে করে গরীব মানুষগুলোর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো অন্তত আত্মসম্মান নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকবে দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে। আর অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারগুলো এই মালামাল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। কার্ডগুলো দিয়ে যাতে দেশের যে কোন স্থান থেকে আপদকালীন সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সেই ব্যাবস্থা রাখতে হবে।

আপা, জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীতে আমাদের ইচ্ছা ছিল দেশে একটি মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে। এ কার্ডটি হতে পারে তার সমাধান। এর মাধ্যমে সবার ঘরে-ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। না হয় সরকারের এত সাহায্য সহযোগীতা দেওয়ার পরও একটা বিশেষ মহলের হাতেই চলে যাবে আপনার দেওয়া এ সকল সাহায্য। হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সরকারি সাহায্য পৌঁছানোর জন্য এটা একটি ডিজিটাল পদ্ধতি হবে বলে আমার বিশ্বাস। যার ফলে কেই বলতে পারবে না আমি কিছুই পাইনি বা একবেলা না খেয়ে আছি।

মোঃ আলাউদ্দিন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads