• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ গত দশ বছরের তুলনায় বেশি

ডেঙ্গু মশা

সংরক্ষিত ছবি

জীব ও পরিবেশ

এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ গত দশ বছরের তুলনায় বেশি

# প্রকৃত রোগীর সংখ্যা অজানা # মাত্র ২২ হাসপাতালের তথ্য যোগ হয় সরকারি হিসাবে # গত পাঁচ দিন গড়ে ৯২ জন করে হাসপাতালে ভর্তি

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগটিতে আক্রান্তদের। গত আগস্ট ও চলতি মাসের পাঁচ দিনে রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। গত পাঁচ দিন গড়ে প্রতিদিন ৯২ জন করে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি হন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে উঠে এসেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ গত দশ বছরের তুলনায় বেশি বলে মনে করছে অধিদফতর। হাসপাতালে প্রতিদিন যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে রোগটির প্রকোপ চলতি বছর অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত সরকারি স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ও ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার বাসিন্দারাও আতঙ্কিত। এ অবস্থার জন্য মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন অনেকে।

এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মশাবাহিত এ রোগের বাহক অ্যাডিস মশা নিধনে কতটা কাজ হচ্ছে- এমন প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য ডা. রশিদ-ই মাহবুবেরও। চলতি বছর ভারী বর্ষণের কারণে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে গত ১৯ জুলাই সতর্ক করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এ সতর্কতার পরও কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে ডেঙ্গু বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও অজানা থেকে যাচ্ছে এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা।  রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট কতজন মারা যাচ্ছে, তারও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারি হিসাবে আসছে না। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাত্র ২২টি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তথ্যই সরকারিভাবে হিসাবে আনা হচ্ছে। এ তালিকায় ঢাকার বিএসএমএমইউসহ বেসরকারি অন্য হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের নাম নেই।

ফলে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, রোগীর প্রকৃত সংখ্যা জানা থাকলে সে অনুযায়ী রোগটির প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সহজ হয়। সবার তথ্য অজানা থেকে যাওয়ায় রোগটির মূল প্রভাব ও কোন ধরনের ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, এসব তথ্যও জানা সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩৭৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। গত আগস্টে ১ হাজার ৬৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নির্ধারিত ২২টি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি হয় ৪৫৮ জন। অধিদফতরের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। ওই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৬৭৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। আর এ বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সংখ্যাটি ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। ডেঙ্গুর মৌসুম মূলত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। তবে শীতের সময় রোগটির প্রকোপ কমে যায়।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তখন মারা যায় ১৪ জন। আর এ বছর জুন থেকে আগস্টের মধ্যেই ১১ জন মারা গেছে।

চলতি বছর মোট আক্রান্তের মধ্যে মাত্র তিনজন রোগী চট্টগ্রাম বিভাগের বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। বাকি ৩ হাজার ৩৭১ জন ঢাকা বিভাগের। রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার গত জুলাই মাসে সাংবাদিকদের জানান, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে জেলায় দেড় শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। মিলিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে ওই সংখ্যা যোগ হয়নি। জেলায় ডেঙ্গু জ্বর দেখা দেওয়ার বিষয়ে ওই সিভিল সার্জন তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরে লিখিত প্রতিবেদনও পাঠান। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিদফতর ঢাকা থেকে একদল চিকিৎসককে তখন রাঙামাটি পাঠায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের খবরকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেসব এলাকায় ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা আছে, যেসব এলাকার হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে তথ্য জানানোর কথা বলা আছে। সব হাসপাতাল অধিদফতরের কথা শোনে না। ঢাকায় অবস্থিত অনেক হাসপাতালকে বার বার বলা হলেও অধিদফতরে ডেঙ্গুর তথ্য পাঠাচ্ছে না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, যে ২২টি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তথ্য নিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের হিসাব রাখে সরকার, সেগুলোর মধ্যে আছে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ-মিটফোর্ড, বারডেম, হলি-ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ, বিজিবি, ইউনাইটেড, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক, ইবনে সিনা, ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার, সেন্ট্রাল, খিদমা, অ্যাপোলো, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক, সালাউদ্দিন ও পপুলার হাসপাতাল।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads