• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
পর্যটন শিল্পের সবটুকু সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

ছবি : সংগৃহীত

জীব ও পরিবেশ

পর্যটন শিল্পের সবটুকু সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

  • মুনযির আকলাম
  • প্রকাশিত ১১ মে ২০১৯

বর্তমান বিশ্বে পর্যটন এক বৃহৎ অর্থনৈতিক খাত হিসেবে বিবেচিত এবং এটি একটি বহুমাত্রিক ও শ্রমঘন শিল্প। সবচেয়ে দ্রুত সম্প্রসারণশীল বৃহৎ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হিসেবে এ শিল্প বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাই ভ্রমণপিপাসু মানুষের নিত্য চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে হাজারও পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই তার পর্যটন খাতকে আকর্ষণীয় করে ব্যাপক অর্থ উপার্জন ও কর্মসংস্থান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এমনকি এ ব্যাপারে অনেক দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতাও চলছে। ফলে অনেক দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ হয়ে উঠেছে পর্যটন খাত। তাছাড়া মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে পর্যটন সক্ষমতা বা প্রতিযোগিতার (টিটিসিআই) দিক থেকে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮। অর্থাৎ পর্যটন খাতে বিশ্ব পর্যায়ে আমাদের অবস্থান বলা চলে নিম্নে। অথচ পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ প্রমাণ করেছে পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রতিবেদন ২০১৭-এর তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫ শতাংশই আসে পর্যটন খাত থেকে। তাইওয়ানে আসে ৬৫ শতাংশ, হংকংয়ে ৫৫ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৫০ শতাংশ ও থাইল্যান্ডে ৩০ শতাংশ। মালদ্বীপের অর্থনীতি প্রায় পুরোটাই পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল। ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোও মূলত পর্যটননির্ভর। মালয়েশিয়ার বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৭ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। এশিয়ার সুইজারল্যান্ড নামে খ্যাত ভুটানও পর্যটনে এখন অনেক এগিয়ে। একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পর্যটন অপরিহার্য মাধ্যম। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এদেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন, হিমছড়ির ঝরনা, বন, পাহাড়, চা বাগান, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ অসংখ্য আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। রয়েছে আরো জানা-অজানা অনেক পর্যটক আকর্ষক স্থান।

১৯৯৯ সালে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তবে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি খাতটি। পর্যটক আকর্ষণে একটি দেশ কতটা নিরাপদ, অবকাঠামো সুবিধা কেমন, বিমানবন্দর কতটা উন্নত, আবাসন ব্যবস্থার মান কেমন— মোটা দাগে এমন ১৪টি বিষয় বা সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের বর্তমান অবস্থা বিশ্ব পর্যায়ে লজ্জাজনক এবং পর্যটক আকর্ষণে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি; এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও পিছিয়ে রয়েছি আমরা। দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ৫ নম্বরে। আমাদের দেশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যটনমেলা, বিভিন্ন দেশে ‘রোড-শো’ ইত্যাদি করা হয় বিপুল অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হয়, পর্যটন এলাকায় যাতায়াত যদি নিরাপদ না হয়, বিনোদন যদি ফ্রি না হয়, ভালো দোভাষী যদি না থাকে, একটু বৃষ্টি হলেই যদি সব তলিয়ে যায় পানিতে, তাহলে কি কেউ আসবে এ দেশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে?

অথচ বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় করার অন্যতম উপায় হতে পারে এই পর্যটন শিল্প। পর্যটন শিল্প জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে ভূমিকা রাখবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনসহ সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থা, দূতাবাসগুলো একত্রে কাজ করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরে এ খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে। এ শিল্পের সবটুকু সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামীর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনে আদর্শ হয়ে উঠুক।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads