• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
হিন্দু রাষ্ট্র গড়ছে মোদি সরকার

ভারতীয় ঔপন্যাসিক, মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়

ইন্টারনেট

এশিয়া

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরুন্ধতী

হিন্দু রাষ্ট্র গড়ছে মোদি সরকার

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০১৮

ভারতে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আর এটা হচ্ছে মোদি সরকারের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গড়ার নীতির কারণে। এভাবেই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন ভারতীয় ঔপন্যাসিক, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অরুন্ধতী রায়। দেশে চলমান এই অনিয়ম-বৈষম্যের কথা বলায় তাকে দেশবিরোধী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তারও কড়া সমালোচনা করে বলেন, সরকারি নীতি অনুসারে নয়, দেশকে তার মতো করে ভালোবাসি। সাংবাদিক ইভান ডেভিসের সঞ্চালনায় ‘বিবিসি নাইট’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। গত সোমবার ওই অনুষ্ঠানে অরুন্ধতীর নতুন বই ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব অটমোস্ট হ্যাপিনেস’ নিয়ে কথা হয়।

বইটির উদ্ধৃতি দিয়ে ডেভস প্রশ্ন করেন, আপনার বইয়ে মোদিকে খুব একটা ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। আপনি যতটা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি কি ততটা নেতিবাচক?

এর উত্তরে অরুন্ধতি স্পষ্ট করেই বলেন, হ্যাঁ, এখন অবস্থা আপনি এখনকার অবস্থাটা দেখুন। এখানে মুসলিম সম্প্রদায় আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। এটা কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। অর্থনৈতিকভাবেও প্রতিনিয়ত দমন করা হচ্ছে তাদের। এই সম্প্রদায়ের মাংসের দোকান, চামড়ার ব্যবসা এমনকি রুমালের ব্যবসাও সরকারের দমননীতির কবলে রয়েছে। সহিংসতা জারি রেখে দেশকে ‘এক জাতি’তে রূপান্তর করা হচ্ছে। আর সেটা হলো হিন্দু জাতি। যেখানে অন্য ধর্মের মানুষগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আপনি নিশ্চয় সম্প্রতি কাশ্মিরে যাযাবর মুসলিম বাকারওয়াল গোষ্ঠীর মেয়ে ৮ বছরের আসিফার ধর্ষণের ঘটনাটি জানেন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছিল। ‌অভিযুক্ত ধর্ষক হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার পক্ষে মিছিলও করেছে স্থানীয় জনগণ। নারীরাও ছিলেন সেই মিছিলে। এটা সত্যিই আশঙ্কাজনক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা বিশ্বের অন্যান্য উগ্র জাতীয়তাবাদী বিশ্বনেতাদের থেকেও মোদিকে খারাপ মনে করেন কি না, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে অরুন্ধতী বলেন, পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্যটা রয়েছে। অবশ্যই ট্রাম্পও নিয়ন্ত্রণহীন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে তাকে ঘিরে উদ্বেগ জারি রয়েছে। সংবাদমাধ্যম উদ্বিগ্ন, বিচারবিভাগ উদ্বিগ্ন, সেনাবাহিনী উদ্বিগ্ন। মার্কিন জনতাও চেষ্টা করছে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে। বিপরীতে ভারতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

কাশ্মিরের জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। আর এজন্য তার নিজ দেশের মধ্যে একটি শ্রেণি তাকে ‘ভারতবিরোধী বা জাতিবিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অরুন্ধতি বলেন, আমার মতো একজনকে ভারতবিরোধী-জাতিবিরোধী আখ্যা দেওয়াটা একটা বড় রকমের তামাশা। আমরা এই ভূখণ্ডকে একটি জাতি বা সরকারের নীতি বা পরিকল্পনার সমর্থক অনুসারে ভালোবাসি না। আমরা ভালোবাসি এখানকার গান-কবিতা-নদী। আমরা লড়ছি এখানকার নদী-পাহাড়-মানুষ আর বৈচিত্র্যের জন্য, যা ভারতকে সুন্দর করে তুলেছে। অরুন্ধতী বলেন, লড়াই ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই, যা আমরা ভালোবাসি, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads