• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ব্যক্তিগত বিমানে রিয়াদে মৃতদেহ পাচার

সাংবাদিক খাশোগি

ছবি : ইন্টারনেট

এশিয়া

ব্যক্তিগত বিমানে রিয়াদে মৃতদেহ পাচার

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০১৮

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে বাঁচাতে চাইছে সৌদি প্রশাসন। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স মিডিয়ায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের বক্তব্যে উঠে আসা অনেক বিষয়ের মধ্যে এটি অন্যতম। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডকে কয়েকজন সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিধিবহির্ভূত পদক্ষেপ হিসেবেও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন তিনি। জুবেইরের মতে, পনের সদস্যের ওই গোয়েন্দা দলটি ‘ভুলবশত’ খাশোগিকে হত্যা করে ঘটনাটি আড়ালের চেষ্টা করে এবং এই ঘটনায় দোষীদের সাজা দিতে সৌদি আরব বদ্ধপরিকর।

মিডল ইজি আই নামে তুর্কি একটি মিডিয়া জানায়, মাহের আবদুল আজিজ মুতরিব নামের এক সৌদি দেহরক্ষীকে কাঁধে একটি বড় ব্যাগ নিয়ে ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দেখা যায়। তিনি একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে খাশোগির মরদেহ রিয়াদে নিয়ে গেছেন বলেও মনে করে মিডিয়াটি। নিরাপত্তা তল্লাশির সময় তিনি তার ব্যাগ তল্লাশি করতে দেননি বলেও মিডিয়াটি জানায় সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে। এ ছাড়া কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী মুতরিবকে বিমানবন্দরে খুব দ্রুত চলাচল করতে দেখা যায়। সৌদি যুবরাজের সঙ্গে প্রায়ই মুতরিবকে বিভিন্ন সফরে দেখা যায়।

বিবিসি জানায়, অভিযুক্ত পনেরো জনের মধ্যে ড. সালেহ মুহাম্মেদ এ তুবাইগিকে ২ অক্টোবর বেলা সোয়া ৩টার সময় ইস্তাম্বুল আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে স্কাই প্রাইম অ্যাভিয়েশন সার্ভিসেসের একটি ব্যক্তিগত বিমানযোগে সৌদি আরব যেতে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে একটি হাড় কাটার করাত ছিল। গত বছর সৌদিতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এই বিমান কোম্পানিটিকে জব্দ করা হয়েছিল।

অপরদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষস্থানীয় সৌদি কর্মকর্তা জানান, খাশোগির মৃতদেহ তুরস্কের বেলগ্রাড জঙ্গলে পুঁতে রাখতে পারে হত্যাকারীরা। তুরস্ক পুলিশ ইতোমধ্যেই বেলগ্রাড জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়েও লাশের সন্ধান পায়নি। তুরস্কের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, খাশোগির মৃতদেহ তুরস্কের বাইরে নিয়ে গেছেন যুবরাজ সালমানেরই একজন দেহরক্ষী।

এদিকে ফক্স মিডিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কনস্যুলেটে অভিযানটি ছিল নীতিবিবর্জিত। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও নিজেদের দায়বোধকে অগ্রাহ্য করে এই অভিযান চালানো হয়েছে। কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যা করে তারা মারাত্মক ভুল করার পাশাপাশি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অভিযুক্তদের কেউই যুবরাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত নয়। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনো জানে না খাশোগির মরদেহ কোথায় আছে। পুরো ঘটনা এখনো তদন্ত করে দেখছি আমরা। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, যদি এই ঘটনার সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জড়িতই না থাকেন তাহলে কেন মেজর জেনারেল আহমেদ আল আসিরিকে বরখাস্ত করেছে সৌদি প্রশাসন। উল্লেখ্য, সৌদি প্রশাসন ইতোমধ্যেই ১৮ জনকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করেছে।

খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর এবারই প্রথম কোনো সৌদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তুলে ধরা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, খাশোগি হত্যাকাণ্ড কেন হয়েছে বা কীভাবে হয়েছে তা এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। শুরুর দিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ খাশোগি হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকা পুরোপুরি অস্বীকার করলেও বর্তমানে তারা হত্যার দায় স্বীকার করছেন। যদিও এই দায় স্বীকারের মধ্যে যথেষ্ট কূটনীতিক ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বব ক্রুকার।

গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান খাশোগি হত্যার নগ্ন সত্য উদঘাটন করার কথা বলেন। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনালাপ হয় এরদোগানের। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সৌদি আরবের সঙ্গে কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলও সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র রফতানি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এ ঘটনায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads