• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মৃত্যু হলো আমালের

ইয়েমেনি শিশু আমাল

ছবি : ইন্টারনেট

এশিয়া

মৃত্যু হলো আমালের

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০১৮

পারল না আমাল হুসেন- যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠা ইয়েমেনি এই শিশু শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হেরে গেছে। এক শরণার্থী শিবিরে সাত বছর বয়সী আমাল মারা গেছে বলে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খবর বিবিসি ও সিএনএন। 

গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমসে আমালের ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিটির মাধ্যমে ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্য সঙ্কটে আক্রান্ত লাখো শিশুর প্রতিনিধি হয়ে ওঠে আমাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এই ছবিটি। না খেতে পাওয়া কঙ্কালসার চেহারার সাত বছরের আমাল সবার মনকে নাড়া দেয়। বিশ্বজুড়ে ইয়েমেন সঙ্কটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় মানুষ। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই এই সঙ্কটকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসলাম শহরে এক শরণার্থী শিবিরে মারা গেছে আমাল। তার মা মরিয়ম আলি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার মন ভেঙে গেছে। সে খুব হাসিখুশি ছিল। এখন আমার অন্য বাচ্চাদের নিয়েও খুব চিন্তা হচ্ছে।

আমালের চিকিৎসক মেকিয়া মাহদি বলেন, ডায়রিয়ায় ভুগছিল মেয়েটি। দুই ঘণ্টা পরপর তাকে দুধ খাওয়ানো হচ্ছিল। কিন্তু সে এতটাই অসুস্থ ছিল যে প্রতিবারই তা বমি করে বের করে দিচ্ছিল। তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অর্থের অভাবে শরণার্থী শিবিরেই আমালকে ফিরিয়ে নেয় পরিবার। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মেকিয়া আরো বলেন, এখানে আরো অনেকেই রয়েছে আমালের মতো। তারাও অপুষ্টির কারণে যেকোনো সময় মারা যেতে পারে।

পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী ফটোসাংবাদিক টাইলার হিকস আমালের ছবিটি তোলেন। ছবিতে দেখা যায়, দুই চোখে শূন্যতা, পাঁজরের হাড় বের হওয়া অতি রুগণ এক শিশু শুয়ে আছে ইউনিসেফের একটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বেডে। অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে ছবিটি ইয়েমেনের আসলাম থেকে তোলা হয়। ছবিটি ফেসবুকে অন্তত ৪৩ হাজার শেয়ার হয়। এই ছবিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়। কঙ্কালসার শিশুটির আত্মিক মৃত্যু অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। শুধু দেহ থেকে প্রাণটা বেরিয়ে যাওয়ার খবরটি প্রকাশ হয়। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হুথি বিদ্রোহীরা মনসুর আল-হাদির সরকারকে উৎখাত করতে রাজধানী সানায় প্রবেশ করে। ফলে ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হয় আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেনে। ইরান হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে এ আশঙ্কায় সৌদি আরব হাদির সমর্থনে ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ শুরু করে। এ কারণে আমালের মৃত্যুর জন্য আঙুল উঠছে সৌদি আরবের দিকে। কারণ ইয়েমেনের এই দুরবস্থা সৌদির সঙ্গে ইরানের ছায়াযুদ্ধ।

ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ইয়েমেন থেকে হটাতে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে সৌদি। হামলা থেকে বাঁচতে তিন বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিল আমালের পরিবার।

জাতিসংঘের মতে, ইয়েমেনে সৌদি জোটে হস্তক্ষেপ শুরু করার পর সেখানে এ পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। খাদ্য সঙ্কট, গৃহহীন হওয়া, অপুষ্টি, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে প্রায় বিশ লাখ মায়ের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ড জানায়।  জাতিসংঘের খাদ্য প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের ওপর বোমা হামলা ও নিষেধাজ্ঞা দেশটির ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে চরম হুমকির মধ্যে ফেলছে। এটা বিগত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে দেশটিকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads