• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শ্রীলঙ্কায় ভোট ৫ জানুয়ারি

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা

ছবি : ইন্টারনেট

এশিয়া

আদালতে যাওয়ার হুশিয়ারি বিক্রমসিংহের দলের

শ্রীলঙ্কায় ভোট ৫ জানুয়ারি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০১৮

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনা আগামী ৫ জানুয়ারি আগাম সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। গত শুক্রবার মধ্যরাতে জারি করা এক আদেশে তিনি এ কথা জানান। এর আগে একই দিন তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। তবে প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি(ইনেপি)। খবর এনডিটিভি ও বিবিসি।

দলটির সদস্য ম্যঙ্গালা সামারাওয়েরা গতকাল শনিবার কলম্বোয় সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তে আমরা খুবই অবাক হয়েছি। তিনি এটা করতে পারেন না। এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আমরা আদালতে যাব। তিনি আরো বলেন, আমাদের দলের সমর্থন নিয়েই ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন সিরিসেনা। সেসময় আমরা ভেবেছিলাম তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার মতো একজন দয়ালু নেতা হবেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি নিজেকে স্বেচ্ছাচারী শাসক হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন। 

ইউএনপির মতে, ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার একক ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই। শ্রীলঙ্কার বামপন্থি পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টও (জেভিপি) সিরিসেনার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। এক বিবৃতিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক তিলভিন সিলভা জানান, এই মুহূর্তে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া পুরোপুরি অবৈধ এবং সংবিধানবিরোধী। রাজনৈতিক সঙ্কট দেশটির প্রশাসনকেও পঙ্গ করে রেখেছে বলে এর আগেই দাবি করেছিল উভয় পক্ষের সংসদ সদস্যরা।

প্রেসিডেন্টের জারি করা নতুন আদেশে বলা হয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে নতুন পার্লামেন্টের কার্যক্রম। শ্রীলঙ্কায় গত দুই সপ্তাহ ধরে যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে তার থেকে উত্তরণের কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবরে দাবি করা হয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বরখাস্ত করা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের বিপক্ষে প্রেসিডেন্ট সমর্থিত মাহিন্দা রাজাপাকসে পার্লামেন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হচ্ছে, এমনটা স্পষ্ট হওয়ায় তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন।

ক্ষমতাকেন্দ্রিক রেষারেষির এক পর্যায়ে গত ২৬ অক্টোবর শেষ দিকে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স ক্ষমতাসীন জোট সরকার ছেড়ে দিলে বিক্রমসিংহকে বরখাস্ত করেন সিরিসেনা। তার স্থলে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজাপাকসেকে শপথ পড়ানো হলেও ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি বিক্রমসিংহে। নিজেকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করে তিনি আদালতে যাওয়ারও হুশিয়ারি দেন। এ ছাড়া দেশটির স্পিকার কারু জয়াসুরিয়া বিক্রমসিংহেকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবি করায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়ে। স্পিকার পার্লামেন্টের সদস্যদের ওপর এই সঙ্কট নিরসনের ভার ছেড়ে দিতে প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান। তার মতে পার্লামেন্টে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবে সেই হবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে পার্লামেন্ট চালু করে দ্রুত নির্বাচন দিতে বলে। সিরিসেনার ঘোষণার আগে শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে দুই সপ্তাহ ধরে চলা সঙ্কটে গভীর উদ্বেগ জানায়। দেরি হলে তা শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এবং বিনিয়োগে ধস নামাবে বলে হুশিয়ারি করে ইইউ। 

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দিল্লির সঙ্গে ইউএনপির ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি এবং সিরিসেনাকে হত্যায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা জড়িত রয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে দুই দলের ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়ে। তারপরই এক সময়ের মিত্র রাজাপাকসের দিকে ঝুঁকে পড়েন সিরিসেনা। বিক্রমসিংহেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেন বিদ্রোহ না হয় সেজন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত করেন। এর পর স্পিকার ও আন্তর্জাতিক চাপে পার্লামেন্ট বসার ঘোষণা দিলেও কার্যত তা হয়নি। শুক্রবারের ডিক্রিতে ওই স্থগিত পার্লামেন্টই ভেঙে দেওয়া হলো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচনের ডাক দিলেও তার মূল উদ্দেশ্য রাজাপাকসেকে ক্ষমতায় বসানো। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে অন্য দলের সংসদ সদস্যদের সমর্থন নেওয়ারও সর্বাত্মক চেষ্টা চালান তিনি, কিন্তু ব্যর্থ হন। যদিও এর আগে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরিসেনার প্রতিই সমর্থন ছিল বিক্রমসিংহের। এরই ধারাবাহিকতায় সংসদ নির্বাচনেও জোট বাঁধেন তারা। উল্লেখ্য, সিরিসেনা ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা রাজপাকসের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads