• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ২২২

সুনামির আঘাতে লন্ডভন্ড সমুদ্র সৈকত

ছবি : ইন্টারনেট

এশিয়া

সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ২২২

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

গতকাল শনিবার রাতে তখন উৎসবের আমেজ। সৈকতে বসেছিল পপ গানের আসর। হঠাৎ ধেয়ে এল বিশাল ঢেউ। এক ধাক্কায় মঞ্চ তো তলিয়ে গেলই। সামনে থাকা কয়েকশো শ্রোতার ভিড়ও ডুবে গেল নিমেষে।  ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালী বরাবর সৈকতজুড়ে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ যে তাণ্ডবের প্রাণ হারালেন অন্তত ২২২ জন, সেটা যে আদতে সুনামি, তা বুঝতেই লেগে যায় অনেকটা সময়। কোনো পূর্বাভাস ছিল না। তাই সতর্কতাও কিছু নেই। মাত্র তিন মাস আগেও যে দেশ সুনামির সাক্ষী হয়েছে, হাজার দুয়েক মানুষের প্রাণ গিয়েছে, সে দেশও প্রথমে বুঝে উঠতে পারেনি আগ্নেয়গিরি ‘আনাক ক্রাকাতোয়া’ (ক্রাকাতোয়ার শিশু) থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে দক্ষিণ সুমাত্রার উপকূল ও জাভার পশ্চিম প্রান্ত সুনামির কবলে পড়েছে। বরং ভয়াল ঢেউ দেখেও প্রথম দিকে আতঙ্ক না ছড়ানোর আর্জি জানাচ্ছিল দূর্যোগ মোকাবেলা কেন্দ্র। তাদের মনে হয়েছিল, পূর্ণিমায় ভরা জোয়ারের জেরে এমনটা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সুনামি তথ্য কেন্দ্রের দাবি, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সুনামি হওয়াটা বিরল ঘটনা। তাই ভূমিকম্প হলেই সুনামির উদ্বেগ তাড়া করে যে দেশকে, তাদের ধন্দে ফেলে দিয়েছে আনাক ক্রাকাতোয়া। ভূমিকম্পে যে সুনামি আসে, তাতে আগাম সতর্কতার কিছু সুযোগ থাকলেও অগ্ন্যুৎপাতে সুনামির বেলায় সেটা সম্ভব হয় না। শনিবার কিছু বোঝার আগেই তাই ভেসে যান কয়েকশো মানুষ। বান্তেন প্রদেশের তানজাং লেসাংয়ে অনুষ্ঠান চলছিল পপ ব্যান্ড ‘সেভেনটিন’-এর। ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দেওয়াল সমান উঁচু জল আচমকা ধাক্কা মারল মঞ্চে। আর্ত চিৎকার ডুবে গেল জলের তোড়ে। সেই ভি়ডিও এখন ভাইরাল। ইনস্টাগ্রামে ব্যান্ডের প্রধান গায়ক রিফিয়ান ফাজারসা জানিয়েছেন, তাদের বেস গিটারিস্ট, ম্যানেজার আর বেঁচে নেই। খোঁজ মিলছে না রিফিয়ানের স্ত্রী ডিলান সাহারার। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘অ্যান্ডি (ড্রামবাদক), হারমান (গিটারিস্ট) এবং উজাংকে (কর্মী) পাওয়া যাচ্ছে না। প্রার্থনা করুন, ওদের আর আমার স্ত্রী ডিলানকে যেন দ্রুত পাওয়া যায়।’

জাভার পশ্চিম প্রান্তে পান্ডেগলাং জেলায় এই সুনামির প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। শুধু এখানেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬৪ জন। কিছুটা উত্তরে সেরাংয়ে মারা গিয়েছেন ১০ জন। সুমাত্রা দ্বীপের দক্ষিণে লামপাংয়ে প্রাণ গিয়েছে ৪৮ জনের। স্টিলের ছাদের ফ্রেম, কাঠের টুকরো আর সব ধ্বংসস্তূপ তালগোল পাকিয়ে জমা হয়েছে কারিতা সৈকতে। জাভার পশ্চিম উপকূলের এই সৈকত পর্যটনের জন্য জনপ্রিয়।

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুমাত্রার উপকূলে পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ায় সমুদ্রের নীচে ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ভারত মহাসাগরের আশপাশে দেশগুতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত আড়াই লাখ মানুষ। শুধু ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৭০ হাজার। এবার এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জখম ৮৪৩ জন। নিখোঁজ ২৮ জন। দানবের মতো ঢেউ গাছ উপড়ে বিছিয়ে দিয়েছে সৈকতজুড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় জানা গিয়েছে, ঢেউ উঠেছিল ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘অগ্নিবলয়ে’ অবস্থিত বলে ইন্দোনেশিয়া বরাবরই দুর্যোগ-প্রবণ দেশ। সেপ্টেম্বরেই সুলাওয়েসি দ্বীপে পালু শহরে ভূকম্প ও সুনামির বলি হন দু’হাজারেরও বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads