• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মিয়ানমারে ফের সেনা অভিযান

মিয়ানমারে ফের সেনা অভিযান

সংরক্ষিত ছবি

এশিয়া

মিয়ানমারে ফের সেনা অভিযান

নতুন করে আসতে পারে লাখ লাখ রোহিঙ্গা

  • উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

আবার নতুন করে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়েছে মিয়ানমারে। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের বোচিডং চিন্দিফ্রাং থেকে কক্সবাজারের উখিয়ায় পালিয়ে এসেছে ৭ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার। তারা কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া গত ১ সপ্তাহে ভারত থেকে কুমিল্লা হয়ে দুই দফায় ৯৩ জন রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্প ইনচার্জ। তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা (চেয়ারম্যান) রশিদ আহমদ জানান, ‘বোচিডং এলাকায় বসবাসরত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি দমনের নামে সরকার পুনরায় বিজিপি সদস্যদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা এ দেশে চলে আসার পর বোচিডংয়ের ক্যাথিও নামের একটি গ্রামে মিয়ানমার সরকার মুরুং মৌলবাদী জনগোষ্ঠীকে সেখানে পুনর্বাসন করেছিল। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সেনারা সে গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।’

রশিদ আহমদ আরো জানান, ‘বৃহস্পতিবার বিজিপির অভিযানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সেখানে নতুন করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক জান্তার জ্বালাও-পোড়াও, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, হত্যা, গুম ও গণগ্রেফতারের ভয়ে প্রায় ২০ লাখ রোহিঙ্গা গৃহবন্দি অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা চলে আসতে পারে।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার জের ধরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। তাদের এ নির্মমতা থেকে রক্ষা পেতে এ দেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমান সরকার এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সুনির্দিষ্ট একটি পর্যায়ে পৌঁছলেও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের গ্রহণে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়া হলে তারা যেকোনো সময়ে সে দেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত।

তারা এও বলেছেন, বর্তমানে যে অবস্থায় রোহিঙ্গারা বসবাস করছে, তা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নয়। উপরন্তু মিয়ানমার সরকার বিদ্রোহী দমনের নামে সম্প্রতি সে দেশে যে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরো বিলম্বিত হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, ‘বোচিডংয়ের চিন্দিফ্রাং থেকে আসা সাত সদস্যের একটি পরিবার ও ভারত থেকে কুমিল্লা হয়ে ২ দফায় আসা ৯৩ জন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।’

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আগের মতো আচরণ করা হলে তারা অবশ্যই চলে আসতে বাধ্য হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, ‘একটি স্থিতিশীল সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আবারো অধিষ্ঠিত হওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হতে পারে। এমন আশঙ্কা করে মিয়ানমার সরকার সে দেশে বিদ্রোহী দমনের নামে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল আহসান খানের সঙ্গে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর প্রভাব বা এসব রোহিঙ্গা এ দেশে চলে আসতে পারে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে দেশে কী হচ্ছে সে ব্যাপারে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads