• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

এশিয়া

কাশ্মিরিদের কান্না শুনবে কে

  • মোমেনা আক্তার পপি
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলওয়ামায় হামলাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান। এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে চলছে দোষারোপের সেই পুরনো খেলা। চলছে হামলা-পাল্টাহামলার হুমকি। চেষ্টা চলছে জঙ্গি তকমা দিয়ে কাশ্মিরিদের স্বাধীনতার লড়াইকে দাবিয়ে রাখার। কিন্তু এতসব করে কি দমানো সম্ভব হবে স্বাধীনতার দাবি- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কাশ্মির ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ দুটি কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। দুটি দেশই কাশ্মিরকে তাদের দখলে নিতে চায়। কিন্তু কোনো দেশই জানতে চায় না কাশ্মিরের জনগণ কী চান। কিছুদিন পরপর পাকিস্তান-ভারতের ক্ষোভ আর প্রতিশোধের বলি হতে হয় নিরীহ কাশ্মিরিদের। দু’দেশের প্রতিশোধের হম্বিতম্বিতে চাপা পড়ে যায় চরম দুর্দশার চাপা কান্না। বছরের পর বছর ধরে কাশ্মিরিদের ওপর দু’পক্ষের নিষ্ঠুরতা চললেও তাদের পাশে নেই কেউ। খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও জিনিউজ।

পুলওয়ামায় আধাসামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলার রেশ না কাটতেই গতকাল সোমবার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গুলিতে নতুন করে চার ভারতীয় সেনা ও এক পুলিশ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজন মেজর। গোপন খবরের ভিত্তিতে পিংলান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর গুলি চালায় জঙ্গিরা। নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানে নিহত হয়েছে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি ও তাদের আশ্রয়দাতাও।

অভিযানে পুলওয়ামা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী কামরান নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের হামলার পর নিয়মিত সেনা তল্লাশি চলার সময় সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে জইশ সদস্যরা। এই হামলার নেতৃত্বে ছিল কামরান। পুলওয়ামার পিংলান গ্রামে একটি বাড়িতে জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্যরা লুকিয়ে রয়েছে, এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে রোববার গভীর রাত থেকে শুরু হয় অভিযান। টানা ১৭ ঘণ্টার অভিযানে জইশের একটি ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে পড়ে আরো দুই বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়।

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পুলওয়ামার হামলার জন্য ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাদের গাফিলতি ঢাকতেই পাকিস্তানের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে ভারত।

নয়াদিল্লির উচিত তদন্ত করে পুলাওয়ামা ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা এবং গাফিলতির জন্য যে হামলা হয়েছে, তা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগকে প্রশ্ন করা। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরুতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, গোয়েন্দাদের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত না করে আগেই কেন পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে। মমতার মতে, দেশপ্রেমের নামে দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। প্রচুর ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে। প্ররোচনায় পা না দিতেও ভারতের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পুরো প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে ভারত। এবার আর পাকিস্তানে শুধু সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, যা করা হবে সেটা ঐতিহাসিক হবে- এমনটাই বলছে মোদি সরকার। অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে ‘মোস্ট ফেভারড ন্যাশন’ (এমএফএন) মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর কাশ্মিরের হুরিয়ত ও বিচ্ছিন্নবাদী নেতাদের সুরক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং এবং সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে কথাও বলেছে নয়াদিল্লি। এ বিষয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যবিষয়ক পরামর্শদাতা আবদুল রাজ্জাক দাউদ বলেন, এই বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামাবাদকে জানায়নি নয়াদিল্লি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথাও বলার প্রয়োজন হতে পারে। তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিযোগ জানানোর হুশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই ওই গোষ্ঠীর সদস্য। এমএফএন তকমা প্রত্যাহারের পরই ভারতে রফতানি হওয়া সব পাকিস্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ২০০ শতাংশ করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। দাউদ বলেন, আমরা বাড়াবাড়ি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাব না। একপক্ষীয়, দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়- সব রাস্তাই খোলা রয়েছে। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবারের হামলাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবারও ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সোহাইল মাহমুদকে ডেকে পাঠানো হয়। এর আগে গত শুক্রবার সোহাইল মাহমুদকে তলব করে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায় নয়াদিল্লি। একই দিন পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকেও নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠায় ভারত। 

দোষারোপের খেলা কবে বন্ধ হবে এবং কবে শান্তি ফিরে আসবে তা জানতে চান কাশ্মিরের সাধারণ জনগণ। পুলওয়ামায় হামলার পর থেকে ভারতজুড়ে হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন কাশ্মিরি জনগণ। কাশ্মিরিদের অভিযোগ, ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো হুমকি দেওয়ার বা তাদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

ধর্মঘটে গত রোববার অচল হয়ে পড়ে কাশ্মির। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারী কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার তথ্য পুলিশকে জানাতে হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। এসব করে কাশ্মির পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কী? দশকের পর দশক ধরে তাদের মনে যে স্বাধীনতার বীজ রচিত হয়েছে তা কী করে উপড়ে ফেলা সম্ভব।

পুলওয়ামার আত্মঘাতী হামলাকারী আদিলের বাবা গুলাম হোসেন দার জানান, হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু-পরবর্তী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পাথর ছোড়ার অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়েছিল তার ছেলে। তারপরই সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা জন্মায় তার। আজ জওয়ানদের ঘরে যে যন্ত্রণা, আমার ঘরেও আমরা সেই একই যন্ত্রণা ভোগ করছি। আদিলের মা জানান, ২০১৬ সালে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল আদিল। সে সময় আচমকা সেনাবাহিনী আদিল ও তার বন্ধুদের আটক করে অপমান এবং মারধর করে সেনাবাহিনীর ওপর পাথর ছোড়ার অভিযোগে।

ছেলের মৃত্যু এবং কাশ্মিরের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিকদের দায়ী করেছেন গুলাম হোসেন। তাদের উচিত ছিল আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু তা না করায় পরিস্থিতি অন্যদিকে মোর নিয়েছে। যুবকদের সন্ত্রাসবাদের দিকে ওনারাই ঠেলে দিচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষের ছেলেরা মরছে, তা জওয়ানদের পরিবারই হোক বা আমাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads