• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পাল্টাপাল্টি হুমকি

পাল্টাপাল্টি হুমকি

ছবি : সংগৃহীত

এশিয়া

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা

পাল্টাপাল্টি হুমকি

  • মোমেনা আক্তার পপি
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হুমকি, হুশিয়ারি চলছেই। সামরিক পথে কাশ্মির সঙ্কট সমাধানের প্রচেষ্টায় কোনো সফলতা না এলেও বলপ্রয়োগের নীতি থেকে সরছে না ভারত। গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাবাহিনী হুমকি দিয়ে বলেছেন, কাশ্মিরে কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই তাকে গুলি খেতে হবে। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা সময় শেষ। তবে এ নিয়ে এতদিন চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতকে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার জেরে নয়াদিল্লি হামলা চালালে ইসলামাবাদও বসে থাকবে না। এর উপযুক্ত জবাব তারা দেবে। তবে তিনি উত্তেজনা প্রশমনে ভারতের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানান। মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। খবর : ডন, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

ইমরান বলেন, যদি তারা সত্যিই হামলা চালায় তাহলে একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে জেনে রাখা দরকার, পাকিস্তান পাল্টা জবাবের বিষয়টি কেবল ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ রাখবে না, কজেও করে দেখাবে। আমাদের হাতে তখন অন্য কোনো বিকল্পই খোলা থাকবে না। পুলওয়ামায় হামলার ঘটনায় আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা এর সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না। তারপরও বারবার ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই ভারত আমাদের দোষারোপ করছে। তারপরও আমি বলতে চাই, কাশ্মিরের হামলা তদন্তে আমরা দিল্লিকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। 

এ হামলায় আমাদের লাভ কী- সেসব কিছু চিন্তা না করেই দোষারোপ করেই যাচ্ছে ভারত। সৌদি যুবরাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ সফরের সময় কোনো বোকাও এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা চালাবে না। তিনি কাশ্মিরে জঙ্গি হামলা নিয়ে ভারতের আক্রমণাত্মক মনোভাবেরও কড়া সমালোচনা করেন। ইমরান বলেন, পাকিস্তান স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন আমরা এটি করতে যাব? পাকিস্তান যে জড়িত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো গোয়েন্দা তথ্য থাকলে তা আমাদের দিন। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, ব্যবস্থা নেব।

কোনো চাপের মুখে নয়- ব্যবস্থা নেব, কারণ সেসব দোষী তখন আমাদের দেশের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান শক্ত। যুদ্ধ শুরু করা খুবই সহজ কিন্তু শেষ করা কঠিন। ভারতের কাছে আমি জানতে চাই, তারা কি অতীতেই বাস করতে চায়?  পাকিস্তান থেকে গিয়ে কেউ সন্ত্রাসী কাজ করলে আমাদের স্বার্থ যেমন হাসিল হয় না, তেমনি ভারত থেকে কেউ এখানে এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে তাদেরও স্বার্থ হাসিল হয় না। পরস্পরকে দোষারোপ করা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইমরান বলেন, একমাত্র দুই পক্ষের আলোচনাই পারে এর সমাধান করতে। যদিও গত সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পুলওয়ামা-কাণ্ড বুঝিয়ে দিয়েছে আলোচনার রাস্তা বন্ধ। সন্ত্রাসবাদী ও তার মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্বশক্তিকে এখন একজোট হতে হবে।

ইমরান আরো বলেন, ভারতীয় রাজনীতিকরা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবেই পুলওয়ামার ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করছে। শুধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নয়, খোদ ভারতীয় নেতারাও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যে বলেছেন, ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাদের গাফিলতি ঢাকতেই পাকিস্তানের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে ভারত। নয়াদিল্লির উচিত তদন্ত করে পুলওয়ামা ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা এবং গাফিলতির জন্য যে হামলা হয়েছে, তা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগকে প্রশ্ন করা। গোয়েন্দাদের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত না করে আগেই কেন পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মমতা বলেন, দেশপ্রেমের নামে দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে।

ইসলামাবাদ প্রত্যাখ্যান করলেও নয়াদিল্লি বরাবরই ভারতে জঙ্গি হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদত আছে বলে অভিযোগ করে আসছে। মাসুদ আজহার ও হাফিজ সাঈদের মতো জঙ্গিরা পাকিস্তানে অবাধে বিচরণ করে বলেও দাবি তাদের। ইমরান খানের বক্তব্যের পর ভারত কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলওয়ামা হামলার পেছনে যে জইশ-ই-মোহম্মদ রয়েছে সেটা স্পষ্ট। আর এই জইশ পাকিস্তানের মদতপুষ্ট, ইমরান সে কথা অস্বীকার করবেন কী করে?

এদিকে মঙ্গলবার জঙ্গিদের পাশাপাশি কাশ্মিরের সাধারণ নাগরিকদেরও কঠোর বার্তা দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। কাশ্মিরে কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই তাকে গুলি করা হবে বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে এস ঢিলোঁ এক সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় বেসামরিকদের হস্তক্ষেপ না করার হুমকিও দেন। তার মন্তব্যের মধ্য কয়েক দিন আগে ভারতীয় সেনাপ্রধানের করা মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানে বাধা দিলে কঠোর পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তরুণদের সঠিক পথে ফেরাতে। কাশ্মিরের সাম্প্রতিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক পথে কাশ্মির সঙ্কটের সমাধান আসবে না। তবুও বলপ্রয়োগের নীতিতেই এগোচ্ছে ভারত।

গত সোমবার রাজস্তানে পাকিস্তানের নাগরিকদের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানিদের শহর ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। হোটেল বা বাড়িতে পাকিস্তানি নাগরিকদের নতুন করে থাকতে দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের কোনো স্পর্শকাতর তথ্য দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি মোবাইল-টেলিফোনে পাকিস্তানের নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলা, কাজ দেওয়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরও কড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ওই নির্দেশ প্রত্যাহার না করলে আগামী দুই মাস এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

গত বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় চালানো আত্মঘাতী হামলাটিকে গত কয়েক দশকে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর চালানোর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরপর থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মিরিদের হেনস্তা, তাদের ওপর অত্যাচারের নানা ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু এভাবে পাকিস্তানের নাগরিকদের ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা ভারতে এই প্রথম।

পুলওয়ামায় হামলার পর থেকেই ভারত জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের নাম জাতিসংঘের ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসীর তালিকায়’ ঢোকানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামাবাদকে বিশ্ব থেকে পুরোপুরি একঘরে করার জন্য নয়াদিল্লির কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। দুই দেশের এ মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ভারত সফরের কথা থাকলেও পাকিস্তান থেকে নিজ দেশে ফিরে যান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads