• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়িঘরে হামলা, পালাচ্ছে শত শত মুসলিম

বাড়িঘরে হামলা, পালাচ্ছে শত শত মুসলিম

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

বাড়িঘরে হামলা, পালাচ্ছে শত শত মুসলিম

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় গির্জা এবং হোটেলে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার পর দেশটির বন্দরনগরী নেগোম্বো ছেড়ে পালাচ্ছে দেশটির শত শত মুসলিম। ওই হামলার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কায় লোকজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে আত্মগোপন করছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা, এনডিটিভি।

গত রোববার কলম্বোর তিনটি গির্জা ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৫৯ জন নিহত ও অন্তত ৫০০ জন আহত হন। ১০ বছর আগে দেশটির হিন্দু এবং জাতিগত তামিলদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল তারপর এই প্রথম দেশটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজধানী কলম্বোর কাছের শহর নেগোম্বোর সেবাস্তিয়ান গির্জায় রোববারের বিস্ফোরণে প্রায় ১০০ জন মারা যান। এ ঘটনার পর শহরটি ছেড়ে যায় ৮০০ মুসলিম। তারা কোথায় আশ্রয় নিয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি গার্ডিয়ান। তবে ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।

এদিকে নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া মুসলিমদের সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছে সেখানকার বাসিন্দারা। প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য জানান, এসব মানুষকে অবশ্যই এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। আমরা তাদের চাই না। আশ্রয় নেওয়া মুসলিমদের সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভের পাশাপাশি পোস্টারও টানাতে দেখা গেছে। একটি পোস্টারে লেখা রয়েছে- ‘পাকিস্তানি শরণার্থীদের প্রয়োজন নেই।’

পুলিশ বলছে, এসব লোকজনকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আগে পর্যন্ত আশ্রিত স্থানে আরো কয়েক দিন কাটাতে হবে। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু খ্রিস্টান, মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ও আছে। কিন্তু দেশটিতে জাতিগত দাঙ্গার যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়েছে খ্রিস্টানরা। সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব গির্জা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশটির জ্যেষ্ঠ এক যাজক বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত গির্জায় কোনো প্রার্থনা সমাবেশ হবে না।

জানা গেছে, নেগোম্বো শহরের সেবাস্তিয়ান গির্জায় আত্মঘাতী হামলার পর থেকে ওই এলাকার মুসলিমদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় বৌদ্ধরা। গত বুধবার কলম্বোর কাছের এই বন্দরনগরী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে কয়েকশ মুসলিম। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মুসলিমদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাসে গাদাগাদি করে তাদেরকে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে।

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আদনান আলী নামে এক তরুণ বলে, বোমা হামলা ও বিস্ফোরণের পর জনগণ আমাদের ঘরবাড়িতে হামলা করেছে। হামলা থেকে বাঁচতে সেও অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায়। এদিকে দেশটিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুগোডার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের পেছনে একটি ফাঁকা জায়গায় বিস্ফোরণটি ঘটে। স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র রুহান গুনাসেকেরা বলেন, আদালতের পেছনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা তৎপরতার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার কথা স্বীকার করেছে শ্রীলঙ্কা।

চলতি মাসের শুরুতেই হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থা শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সেভাবে আলোচনা হয়নি। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দায় নিতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য সঠিক লোকজনের কাছে পৌঁছানো গেলে হয়তো এ হামলা এড়ানো যেত বা ক্ষয়ক্ষতি কম হতো।

পার্লামেন্ট নেতা লক্ষণ কিরিয়েলা বলেন, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সম্ভাব্য হামলা নিয়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি। শীর্ষ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন করেছিলেন। তথ্য হাতে থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেননি। ৪ এপ্রিল ভারতের সতর্কতার তথ্য এসে পৌঁছায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কেউই তা গ্রহণ করেননি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads