• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আট সপ্তাহের আগে প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব নয়

ফাইল ছবি

এশিয়া

আট সপ্তাহের আগে প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব নয়

  • মোমেনা আক্তার পপি
  • প্রকাশিত ২৯ জানুয়ারি ২০২০

করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ধারণার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গতিতে বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এ নিয়ে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। কবে এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে কেউ বলতে পারছে না। এখনো এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কারে দিন-রাত খেটে যাচ্ছেন। তাদের মতে, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, আট সপ্তাহের আগে কোনো ধরনের প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব নয়। এ সময়ের মধ্যে আরো কতজন এ ভাইরাসের শিকার হবে, তা ভেবে শিউরে উঠছে বিশ্ববাসী। চীন সরকারের মতে, ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সে দেশে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে পূর্বের তুলনায় দিগুণ। খবর: বিবিসি, আলজাজিরা ও ডেইলি মেইল।   

তবে শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া নতুন ভাইরাসটির বিস্তার আটকাতে চীন সক্ষম হবে-এমন আশাবাদ জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন ওয়ার্ল্ড হেলথ  অর্গানাইজেশনের (হু) প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রেইয়েসুস। উদ্বেগ থাকলেও চীন থেকে এখনই বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন বলে চীনা গণমাধ্যম জানিয়েছে।   

পরিস্থিতি নিয়ে বেইজিংয়ে চীনের স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন ডব্লিউএইচওর প্রধান গ্যাব্রেইয়েসুস। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে চীন সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলেও জানিয়েছে সিনহুয়া। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে গ্যাব্রেইয়েসুসের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। হুর মতে, তাদের শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করা। 

সম্প্রতি চীন থেকে বিভিন্ন দেশে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মানুষের খোঁজ মিললেও তাদের মধ্যে কেবল একজনের দেহেই ভাইরাসটি অন্য মানবদেহ থেকে সংক্রমিত হয়েছিল- এমনটা নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে হু। এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে খুব বেশি মানুষের মধ্যে মানবদেহ থেকে মানবদেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা যায়নি। ভাইরাসটির বিস্তৃতি সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের নজরদারিতে আছে, টুইটারে বলেছে হু।  

নতুন এ ভাইরাসের জীবাণুকে হু নাম দিয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯-সিওভি। গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা নতুন এ ভাইরাসটি চীনে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে বলে জানালেও এখনই বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানায়। নিউমোনিয়াসদৃশ ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে উহানে সোমবার থেকে সেনাবাহিনী কাজ করছে। কোটি বাসিন্দার শহরটির সঙ্গে সব ধরনের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও চীন এ পর্যন্ত এর উৎপত্তি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। 

হু যাই বলুক না কেন, উহানের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। কোনোভাবেই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যাচ্ছে না। যতই সময় যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এমন অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে টানা কাজ করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। একটু বিশ্রাম বা ঘুমের সময়ও পাচ্ছেন না তারা। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, টানা কাজের চাপ আর ক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক চিকিৎসক। অনেকেই চিৎকার করছেন এবং কেঁদে যাচ্ছেন। ওই ভিডিও দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, সেখানকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।  

এর আগে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন যে, চিকিৎসকরা টয়লেটে যাওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে প্রাপ্ত বয়স্কদের ডায়াপার পরেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। উহানে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিশ্রাম ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন। বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে শহরের হাসপাতালগুলো লোকজনে পরিপূর্ণ। কোথাও পা ফেলারও জায়গা নেই।  

রোগীদের শরীর থেকে যেন এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য পুরো শরীর ঢাকা পোশাক এবং মাস্ক পরে রয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরা। এ পোশাক বারবার খোলাটাও বেশ কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। তারা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক চীনা চিকিৎসক বলেন, হয়তো এই সুরক্ষিত পোশাকটিই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আমরা কোনো কিছুই নষ্ট করতে চাচ্ছি না।  

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উহানের একটি হাসপাতালে এক নারী সাদা রঙের মেডিকেল কোট পরে চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন, আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। তার সহকর্মীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই তার কান্না থামছে না। অপর এক ভিডিওতে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দেওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে এক চিকিৎসককে। বলেন, রোগী এত বেশি হয়ে গেছে যে, চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ শয্যা দরকার তা নেই। 

এদিকে গত সোমবার জার্মানি জানিয়েছে সেখানকার এক লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের নাগরিকদের চীন ভ্রমণে সতর্ক করেছে। চীনের বাইরে গতকাল মঙ্গলবার ভারতের কলকাতার হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থাইল্যান্ডের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা এবং কম্বোডিয়াসহ ডজন খানেকের বেশি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে।  

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে নতুন এ ভাইরাস নিয়ে পৃথিবীজুড়ে উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। মঙ্গলবার টানা ষষ্ঠ দিনের মতো দরপতন হয়েছে তেলের বাজারে। এর এক দিন আগেই সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছিল গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড এলসিওসি১-এর দাম নেমেছিল প্রতি ব্যারেল ৫৮ দশমিক ৫০ ডলারে। মঙ্গলবার তা কমেছে আরো ০.৬ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) সিএলসি১-এর দর দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৮৫ ডলার, যা গত অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। 

যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার পর চীনসহ আক্রান্ত দেশগুলো ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধের ঘটনায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে বলে ধারণা বিনিয়োগকারীদের। এতে যথেষ্ট মজুত ও সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেলের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। 

ব্রিটেনের বহুজাতিক ব্যাংক বারক্লেস জানিয়েছে, তাদের দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২০ সালে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ৬২ ডলার ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৫৭ ডলারের চেয়ে আরো দুই ডলার কমে যেতে পারে। চলতি বছরের প্রথমভাগে তেলের চাহিদা প্রতিদিন ছয় থেকে আট লাখ ব্যারেল হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ভাইরাস আতঙ্কের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে সেক্ষেত্রে ওপেকের কাছে সহযোগিতা চাইবে বারক্লেস। 

যদিও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের তেমন ভূমিকা চোখে পড়েনি। তবে সোমবার সংগঠনটির নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরব জানিয়েছে, দরকার হলে যেকোনো বিষয়ে সাড়া দেবে ওপেক।  ওপেকের সঙ্গে রাশিয়া যুক্ত হওয়ার পর তা ওপেক প্লাস নামে পরিচিতি পায়। সংগঠনটি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত তিন বছর ধরেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচ লাখ থেকে ১৭ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত তেল আটকে রাখার বিষয়েও সম্মত হয়েছে তারা। তবে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুত বেড়েছে। 

অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে নিম্নমুখী প্রধান প্রধান সব শেয়ারবাজারও। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের প্রধান তিনটি সূচকেই দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। লন্ডনের এফটিএসই সূচকের পতন গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে চীনে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেশি, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।   

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads