• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

এশিয়া

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৯ দেশ সঙ্গ ছাড়ল মিয়ানমারের

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০২১

জাতিসংঘে মিয়ানমারে জাতিগত হত্যার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রশ্নে ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে চীন, রাশিয়াসহ ৯ দেশ। ভোটাভুটি থেকে বিরত ছিল ভারত, জাপানসহ ২৫ দেশ। এছাড়া আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের ৯ দেশ রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গ ছেড়েছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ-এ নয় দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রস্তাবটির পক্ষে ১৩০টি ভোট পড়েছে। আর বিপক্ষে পড়েছে ৯টি ভোট। অথচ ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুবিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অবস্থান না নিয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছিল ওই ৯টি দেশ। গতকাল শনিবার নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্র, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ এবং আনান কমিশনের এক সদস্যের টুইট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার ওই ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের বিপক্ষে অর্থাৎ মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছে মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে। আর ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও জাপানসহ ২৫টি দেশ প্রস্তাবের ভোটাভুটি থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) গত বছরের নভেম্বের জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে প্রস্তাবটি আনে। ইইউ এবং ওআইসির প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরুর প্রসঙ্গ এবং রোহিঙ্গা ও সংখ্যালঘু অন্য জনগোষ্ঠীদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিসহ আরো কিছু বিষয়ে মিয়ানমারকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

নিউইয়র্কের কূটনীতিক সূত্রগুলো গতকাল শনিবার জানিয়েছে, গত নভেম্বরে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে মিয়ানমারের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইইউ এবং ওআইসির প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের ওপর এবার বছরের শেষ দিনের কর্ম অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ও মিয়ানমার বিরোধিতা করে। জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের কর্ম অধিবেশনে প্রস্তাবটি নিয়ে সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এ নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানিয়েছিল। আর এবারের ভোটাভুটিতে তৃতীয় কমিটির চেয়ে কম ভোট পেয়েছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তৃতীয় কমিটির নেওয়া প্রস্তাব গত বৃহস্পতিবার রাতে ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৮তম প্লেনারি অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে প্লেনারি অধিবেশনের সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এ নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানিয়েছিল।

আনান কমিশন নামে পরিচিত রাখাইনবিষয়ক সাবেক পরামর্শক কমিশনের অন্যতম সদস্য ও ডাচ কূটনীতিক লেটেশিয়া ভ্যান্ডেন অ্যাসাম গত শুক্রবার টুইটে ভোটাভুটি বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০১৯ সালের প্রস্তাবের ভোটাভুটির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ৯টি দেশ তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এই ৯টি দেশ এবার প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ মিয়ানমারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।

নিউইয়র্কের কূটনীতিক সূত্রগুলো গতকাল জানায়, মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য গঠিত কমিটি আইআইএমএমের জন্য তহবিলসহ আরো কিছু বিষয়ের কারণে ভোটাভুটি পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ ২০২০ সালের শেষ দিনে জাতিসংঘের শেষ কর্ম অধিবেশেন রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার প্রশ্নের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।

যথারীতি জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াউ মো তুন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির ফল ভালো হবে না। এই চাপকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকার প্রশ্নে জাতিসংঘকে অপব্যবহার করা এবং চাপ দেওয়াকে মিয়ানমার মেনে নেবে না। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এটি রাখাইন রাজ্যে সংকট সমাধানে কোনো কাজে আসবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads