• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সু চির খোঁজ নেই

ফাইল ছবি

এশিয়া

সু চির খোঁজ নেই

  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে আটক দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। খোঁজ নেই তার সঙ্গে বন্দি হওয়া সরকারের অপর মন্ত্রীদেরও। তবে দেশটির শতাধিক আইনপ্রণেতা নেপিদো-র আবাসিক কমপ্লেক্সেই গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের এক দিন পর গতকাল মঙ্গলবার অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সু চিসহ আটক অন্য নেতাদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এনএলডির একজন এমপি এই পরিস্থিতিকে ‘উন্মুক্ত বাতাসে বন্দিদশা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি টেলিফোনে এএফপির সঙ্গে কথা বলেন। তবে সামরিক বাহিনীর ভয়ে নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’

দলটির একজন এমপি জানিয়েছেন, তিনি এবং আরো প্রায় ৪০০ আইনপ্রণেতা নেপিদো-র আবাসিক কমপ্লেক্সে পরস্পরের সঙ্গে এবং ফোনে তাদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। তবে তাদের ওই আবাসন কমপ্লেক্স থেকে বেরুতে দেওয়া হচ্ছে না।

এমপিদের আবাসিক কমপ্লেক্সে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের উপস্থিতির কথাও জানান এই আইনপ্রণেতা। তিনি জানান, কমপ্লেক্সের ভেতরে পুলিশ এবং বাইরে প্রহরায় রয়েছে সেনাসদস্যরা। সেখানে সু চি-র দলসহ অন্য ছোটখাটো দলের এমপিদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। জান্তা সরকার তাদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে; এমন শঙ্কায় নিদ্রাহীন রাত কাটছে এমপিদের।

ভয় সত্ত্বেও দলটি তাদের ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এ আহ্বান জানায়। সেখানে আরো বলা হয়, ‘এই ঘটনা দেশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এক কলঙ্ক হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে আমরা ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফল মেনে নিতে সেনাবাহিনীর প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

এই নেতা এএফপিকে বলেন, সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট গৃহবন্দি অবস্থায় আছে। তবে তাদের কোথায় রাখা হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়।

এরই মধ্যে মিয়ানমারে রাজনীতিকদের আটক ও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেনা ও দাঙ্গা পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছিল। রাজধানীতে হেলিকপ্টারকে চক্কর দিতেও দেখা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনা ও পুলিশের গাড়ি অবস্থান নিয়ে আছে। ইয়াঙ্গুনের পরিস্থিতিও একই রকম।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মঙ্গলবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের ম্যানেজার ফোন মিন্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আগামী মে পর্যন্ত বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকবে। তবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ তিনি উল্লেখ করেননি। মিয়ানমার টাইমস জানিয়েছে, ত্রাণের বিমানসহ সব ধরনের বিমানের অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি আগামী ৩১ মে রাত বারটা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত সোমবার ভোরে সু চি, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ও এনএলডির প্রায় ৪৫ জন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির সামরিক বাহিনী। তাদের গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পরই মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা জারি করা হয়। রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতায় বসেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং।

ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটির ২৪ জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে সামরিক সরকার এবং সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ১‌১ জন মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস এখবর জানিয়েছে।

এনএলডির মুখপাত্র মিয়ো নিউন্ট রয়টার্সকে বলেন, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ও অন্য শীর্ষ নেতাদের ভোরেই অভিযান চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু সোয়ে নিয়া ওয়ার সায়াদাওয়া। এই ভিক্ষু সু চি’র এনএলডির সমর্থক।

মিয়ানমারে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ফের বড় জয় পায়। নির্বাচনে সু চির দল ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৯৬টি আসন পায়। আর পার্লামেন্টের ৪৭৬টি আসনের মধ্যে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পায় মাত্র ৩৩টি আসন। এই নির্বাচনের ফল ঘিরে সংকট ঘনীভূত হয়। সেনাবাহিনী ও ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ নাকচ করে। গত সোমবার মিয়ানমারের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads