• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে বিক্ষোভ

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে বিক্ষোভ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারের সামরিক সরকার জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমেছে হাজারো মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার টানা চতুর্থ দিনের মতো বিভিন্ন শহরে সমবেত হয়ে সেনা শাসনের প্রতিবাদ জানায় তারা। জলকামান এবং ফাঁকা গুলি চালিয়েও পুলিশ রাজপথ থেকে জনগণকে সরাতে পারছে না। বাড়তে থাকা আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে হাসপাতাল, স্কুল ও সরকারি দপ্তরগুলোতে। এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিউজিল্যান্ড সফরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এ ঘোষণা দেন। খবর : বিবিসি ও সিএনএনের।  মিয়ানমারের প্রধান দুই শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়ে পাঁচজনের বেশির সমাগম নিষিদ্ধ করেছে সেনা সরকার। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা সেই হুঁশিয়ারি আমলে নিচ্ছে না। গতকাল রাজধানী নেপিদোতে সমবেত হয় বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমবেত হওয়া এসব বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দিতে পুলিশ প্রথমে জলকামান প্রয়োগ করে। পরে তাদের ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালানো শুরু করে। সেখানে বেশ কয়েকজন আহত হয়।

বাগো শহরে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারীর ওপর জলকামান প্রয়োগ করেছে পুলিশ। এছাড়া ইনসেইন, মান্দালয়ের মতো অন্য শহরগুলোতে ক্রমেই ভিড় বাড়ছে বিক্ষুব্ধ জনতার। আন্দোলনে যোগ দেওয়া শিক্ষক থেইন উইন সোয়ে বলেন, আমরা তাদের হুমকিতে ভীত নই। সে কারণেই বের হয়ে এসেছি। তাদের ভোট জালিয়াতির অজুহাত মানছি না। আমরা কোনো সেনা স্বৈরশাসন চাই না। গত সোমবার প্রথমবারের মতো নেপিদোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তার পরও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে সেখানকার জনতা।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী চলমান বিক্ষোভে দেশটির কয়েক হাজার সরকারি কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। রাজধানী নেপিদোতে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যোগ দেন তারা। গত বুধবার চিকিৎসকদের উদ্যোগে শুরু হওয়া স্বীকৃতি না, অংশগ্রহণ না-শিরোনামে কর্মসূচি তাদের অংশগ্রহণে আরো গতি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এতে শামিল হয়েছেন। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতির খবরে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিনিয়োগ, সমাজকল্যাণ ও অবকাঠামো মন্ত্রণালয় এবং বন ও রেলওয়ে বিভাগের কর্মীরা  ধর্মঘটে যোগ দেন।  বিনিয়োগ ও বিদেশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা এক বিবৃতিতে জানান, সামরিক শাসনের অধীনে কাজ করতে তারা আগ্রহী না। তাই তারা চলমান আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা ২০০৮ সালের সংবিধানসম্মত মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসের কথা জানিয়েছে। এতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মীদের ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সমাজকল্যাণ দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেই আমরা কাজে ফিরব। নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী উপসচিব ফেসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি বিক্ষোভে যোগ দেবেন। এছাড়া শিক্ষক, বন বিভাগ, সাধারণ প্রশাসনের কর্মী ও উর্দি পরা নার্সরা বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। সামরিক শাসনের বিরোধিতার পাশাপাশি আটক বেসামরিক সরকারের নেতা, অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করায় মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করেছে নিউজিল্যান্ড। এছাড়া মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিউজিল্যান্ড সফরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গতকাল নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিয়ানমারের সামরিক সরকার সুবিধা পেতে পারে, এমন কোনো সহায়তা কর্মসূচিও সেখানে বাস্তবায়ন করবে না তারা।  আমরা তাদের কঠোর বার্তা দিতে চাই। আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবই আমরা করব। উচ্চ পর্যায়ের সব আলোচনা আমরা স্থগিত করব। এমন কোনো সাহায্য আমরা মিয়ানমারে দেব না, যেটা সামরিক সরকারকে সুবিধা দেবে। সেই সঙ্গে সু চিসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারকে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের সহায়তা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নানাইয়া মাহুতা এক বিবৃতিতে বলেন, তার সরকার মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এদিন অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads