• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
উত্তাল মিয়ানমার, বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত ২

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

উত্তাল মিয়ানমার, বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত ২

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে আজ শনিবার সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়লে দুই জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশের গুলিতে তিন জন নিহত হলো। নগরীটির স্বেচ্ছাবেসী জরুরি সেবা সংস্থা পারাহিতা ডারহির নেতা কো অং বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর: বিবিসি, সিএনএন ও আল জাজিরার।

সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্রতিদিনই জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ছে। জাতগত সংখ্যালঘুরাও জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। শনিবার মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি শহরে অভ্যুত্থান বিরোধীরা রাস্তায় নেমে এসে সামরিক শাসনের অবসান ও নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়। মান্দালয়ে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও গুলির মুখে কিছু প্রতিবাদকারী গুলতি ছুড়ে জবাব দেয়। তবে পুলিশ তাজা গুলি ছুড়েছে না রবার বুলেট ব্যবহার করেছে প্রাথমিকভাবে তা পরিষ্কার না।

এদিকে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে মিয়ানমারে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে দেশটির সংখ্যালঘু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা। গতকাল শনিবার ইয়াংগনে নাগা, চিনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়। তারা গণতান্ত্রিক সরকার পুনর্বহাল, সু চি ও অন্যান্য রাজনীতিকদের মুক্তি এবং ২০০৮ সালের সংবিধান বাতিলের দাবি জানায়। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দশ দিন পর মৃত্যু হওয়া তরুণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অভ্যুত্থানবিরোধীরা। যুক্তরাষ্ট্র আবারও ক্ষমতা ছাড়তে জান্তা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

জাতিগত সংখ্যালঘুরা বিক্ষোভে নতুন সংবিধানে ফেডারেল সিস্টেম রাখারও দাবি জানিয়েছেন। স্বৈরতন্ত্রের অধীনে দেশে ফেডারেল ব্যবস্থা চালু করা যাবে না। আমরা সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দিতে পারি না- বলেছেন বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক, নাগা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য কে জুং। অনেক সংখ্যালঘু এখনো বিক্ষোভে নামেনি বলেও জানান এ যুবনেতা। তারমতে, জাতিগত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অং সান সু চির জোট গড়ার ব্যর্থতার প্রতিফলন এটি। এরপরও এই লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। স্বৈরতন্ত্রের পতন পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।

চিন জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সালাই মন বোই বিক্ষোভে জাতিগত সংখ্যালঘুরা মূলত ৪টি দাবির কথাই জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছে। এগুলো হল- সংবিধান বাতিল, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ফেডারেল সিস্টেম চালু ও সব বন্দির মুক্তি। অনেকেই আছে যারা এনএলডিকে পছন্দ করে না। কিন্তু আমরা এনএলডিকে নিয়ে কথা বলছি না। আমরা সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কথা বলতে এসেছি। এদিন জাতিগত সংখ্যালঘুদের বর্ণিল বিক্ষোভ ছাড়াও ইয়াংগনের সুলে প্যাগোডাতে কয়েকশ বিক্ষোভকারী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এদিকে বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার দশ দিন পর মৃত্যু হওয়া তরুণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অভ্যুত্থানবিরোধীরা। গতকাল দেশটির বড় দুটি শহরে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ইয়াঙ্গুনে রাস্তার পাশে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন হাজার খানেক বিক্ষোভকারী। নিহত মিয়া তোয়েত তোয়েত খাইনের ছবি রাখা হয়েছিল উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলীর ভেতরে। শুক্রবার তোয়েত খাইনের পরিবার তার মৃত্যুর কথা জানায়। ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর সামরিক শাসনের চলমান বিক্ষোভে তিনিই প্রথম নিহত হন।

স্মরণ সভায় বিক্ষোভকারীরা সামরিক শাসনবিরোধী স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। নিহতের আলোকচিত্রে অনেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস নিহতের পরিবারের প্রতি শোক জানিয়েছেন। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতেও সামরিক সরকারের আহ্বান জানান তিনি। জানান, আচরণ পরিবর্তনের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আমরা মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছি।
দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে মিয়া তোয়েতের ছবি ও ফুল নিয়ে জড়ো হন হাজার খানেক বিক্ষোভকারী। এটি আয়োজন করেন স্থানীয় একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখানেও অনেকে দেশটিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে প্ল্যাকার্ড ও চিহ্ন তুলে ধরেন। সামরিক সরকারের দমন-পীড়ন ও ধরপাকড় উপেক্ষা করেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও কারচুপির অভিযোগ তুলে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে ক্ষমতা দখল করে জান্তা সরকার। আটক করে সু চিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের। সু চির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ১ মার্চ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে প্রায় ৫৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রেলওয়ে কর্মী, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads